কর মেলার শেষ দিনে উপচে পড়া ভিড়

উপচে পড়া ভিড়ের মধ্য দিয়ে গতকাল রাজধানীতে সপ্তাহব্যাপী কর মেলা শেষ হয়েছে l ছবি: প্রথম আলো
উপচে পড়া ভিড়ের মধ্য দিয়ে গতকাল রাজধানীতে সপ্তাহব্যাপী কর মেলা শেষ হয়েছে l ছবি: প্রথম আলো

কর মেলার শেষ দিন ছিল রীতিমতো লোকে লোকারণ্য। হাজার হাজার করদাতা গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজধানীর কর মেলায় ভিড় করেন। তাঁরা ফরম পূরণ করে বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন দিয়েছেন। এতটুকু পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলেছে। এরপরই বিপত্তি বেধেছে। এবারের মেলায় আগে থেকেই ঘোষণা ছিল, মেলায় রিটার্ন দিলে কর কার্ড দেওয়া হবে। তাই কর কার্ডের জন্য দীর্ঘ লাইন দিতে হয়েছে করদাতাদের।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্মাণাধীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনের কর মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, কর কার্ডের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন কয়েক হাজার করদাতা। লাইনটি মূল প্রবেশপথের কাছে শুরু হয়ে সাপের মতো এঁকেবেঁকে পুরো মেলা ঘুরে কার্ডের বুথে গিয়ে ঠেকেছে। দুপুরের পর থেকে এই লাইন আরও বড় হয়েছে। ফলে একেকজন করদাতার কর কার্ড পেতে অন্তত দেড়–দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে।
উপায়ন্তর না দেখে শেষ পর্যন্ত পৌনে তিনটার দিকে এনবিআরকে ঘোষণা দিতে হয়েছে যে ১২ নভেম্বর থেকে নির্দিষ্ট কর সার্কেলে রিটার্ন জমা দিলেও কর কার্ড পাওয়া যাবে। আর যাঁরা মেলায় রিটার্ন দিয়েছেন, তাঁরা প্রাপ্তি রসিদ নিয়ে গেলে কর কার্ড পাবেন। স্কাউটস সদস্যরা হ্যান্ডমাইক নিয়ে অনবরত এই ঘোষণা দিয়ে যান। তবু লাইনে দাঁড়ানো করদাতারা নির্বিকার-যেন কর কার্ড নিয়েই যেতে হবে।
মেলায় আসা রামপুরার হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেলা থেকেই কর কার্ড নিয়ে যেতে চাই। কর কার্যালয় থেকে কর কার্ড নিতে গেলে হয়রানির আশঙ্কা আছে। সঙ্গে সঙ্গে কর কার্ড নাও পেতে পারি। আবার টাকাপয়সা চাইতে পারেন করকর্মীরা।’
কর কার্ড নিয়ে এত হইচই। কিন্তু এই কার্ড নিয়ে বিশেষ কোনো সুবিধা পাওয়া যাবে না। সরকারি যেকোনো সেবার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার মিলবে। তবে এটি করদাতাদের জন্য একধরনের স্বীকৃতি। মেলায় এসে রিটার্ন দিয়েছেন ইফাদ গ্রুপের কর্মকর্তা হেমায়েত হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর কার্ডের বিপরীতে ন্যূনতম সুবিধা দিলে ভালো হতো। তবু ভালো লাগছে, একধরনের স্বীকৃতি পেলাম।’
ভিড় সামলাতে শেষ দুই দিন রাত ১০টা পর্যন্ত মেলার সময় বাড়ানো হয়। গতকাল সন্ধ্যার পরও বিপুলসংখ্যক করদাতা মেলা প্রাঙ্গণে ছিলেন।
কর অফিসে গেলে নানা ধরনের হয়রানির মুখে পড়তে হয়, ঘুষ ছাড়া ফাইল চলে না—বছরের পর বছর এ অভিযোগ করে আসছেন করদাতারা। ২০১০ সাল থেকে কর মেলা চালু হওয়ার পর প্রতিবছরই মেলায় রিটার্ন জমার আগ্রহ করদাতাদের মধ্যে দিন দিন বেড়ে চলেছে। এবার তো অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে।
এবার রাজধানীসহ সাতটি বিভাগীয় শহরে সাত দিন মেলা হয়েছে। সব জেলা শহরে চার দিন, ৫৬টি উপজেলায় চার দিন ও ৩৪টি উপজেলায় দুই দিন মেলা হয়। ৭১টি উপজেলায় এক দিন ভ্রাম্যমাণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।