সীমার চেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা রাখছে সোনালী ও জনতা

সোনালী ও জনতা ব্যাংক
সোনালী ও জনতা ব্যাংক

রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ও জনতা ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে সীমার চেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা মজুত রাখছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কয়েক দফা নির্দেশনা দেওয়ার পরও ব্যাংক দুটি তা কমিয়ে আনতে পারেনি। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে একাধিকবার জবাবদিহি করতে হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।

দুই ব্যাংকই দুটি সমস্যার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত সীমার মধ্যে নিয়ে আসতে পারছে না। সোনালী ব্যাংকের সমস্যা হলো, তারা অনিয়মে ডুবে থাকা লন্ডন কার্যক্রমে বিপুল অর্থ দিয়ে রেখেছে, যা ফেরত আনা যাচ্ছে না। অন্যদিকে জনতা ব্যাংক ক্রিসেন্ট গ্রুপ নামের একটি চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি বিল কিনেছে। এ বিলের বিপরীতে রপ্তানি আয় সময়মতো দেশে আসছে না। ফলে ব্যাংকটির বৈদেশিক মুদ্রার দায় বেড়ে গেছে।

ব্যাংকগুলো সাধারণত রপ্তানি আয় বা প্রবাসী আয় সংগ্রহ করে বৈদেশিক মুদ্রা পায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধি অনুযায়ী, এর পরিমাণ তার সংবিধিবদ্ধ মূলধনের ২০ শতাংশের বেশি হলে মুদ্রা বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য ব্যাংকের কাছে বিক্রি করে দিতে হয়। মুদ্রা রাখার সীমাকে বলা হয় নেট ওপেন পজিশন।

ব্যাংকগুলো বেশি রাখলে বাজারে ডলার, পাউন্ডসহ বিভিন্ন মুদ্রার সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণেই সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর সংবিধিবদ্ধ মূলধনের পরিমাণ অনুযায়ী সবাই মিলে ২১৯ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা রাখতে পারে।

ব্যাংকগুলো সবচেয়ে বেশি মুদ্রা রাখে মার্কিন ডলারে। এ ছাড়া ইউরো, জাপানি ইয়েন, ব্রিটিশ পাউন্ডেও কিছু মুদ্রা রাখে ব্যাংকগুলো।

চলতি সপ্তাহের প্রথম দিনে ব্যাংকগুলোর কাছে বিদেশি মুদ্রা ছিল ৫২ কোটি ৯২ লাখ ডলার। সোনালী ও জনতা ব্যাংক ছাড়া সব ব্যাংকেরই মজুত সীমার মধ্যে আছে। নিয়ম অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংক ৭ কোটি ৬৭ লাখ ডলার রাখতে পারে। তবে গত রোববার ব্যাংকটির হিসাবে ছিল ১৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। জনতা ব্যাংক রাখতে পারে ৯ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। তাদের কাছে ছিল ১১ কোটি ৮৯ লাখ ডলার।

লন্ডন কার্যক্রম বা সোনালী ইউকেতে মূলধন ও বিনিয়োগ বাবদ প্রায় ১৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করা আছে সোনালী ব্যাংকের। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার উচ্চপর্যায় বা এসএমটি সভার এক কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়, নানা অনিয়ম সত্ত্বেও সোনালী ইউকের কাছে দীর্ঘদিনের বিনিয়োগকৃত ১৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার সংরক্ষণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে ব্যাংকটি ৪০ শতাংশের ওপরে বৈদেশিক মুদ্রা ধারণ করছে।

নানা অনিয়মের পর সোনালী ব্যাংকের লন্ডন কার্যক্রমের বেশ কয়েকটি শাখা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বাংলাদেশ সরকার ও সোনালী ব্যাংক মিলে প্রতিষ্ঠানটিতে আরও ৩৫০ কোটি টাকার মূলধন জোগান দেয়। সম্প্রতি সোনালী ব্যাংকে লন্ডন কার্যক্রমের হিসাব খোলা, আমানত সংগ্রহ ও ঋণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এখন নতুন করে ব্যাংকটির আমদানির বিল পরিশোধসহ ক্লিয়ারিং সেবার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।

জনতা ব্যাংক যে ক্রিসেন্ট গ্রুপকে নিয়ে বিপাকে, সেই গ্রুপটি ইমামগঞ্জ শাখার গ্রাহক। ব্যাংক সূত্র জানায়, ক্রিসেন্ট গ্রুপের অধীন কয়েকটি কোম্পানি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে রাজধানীর ইমামগঞ্জ শাখার মাধ্যমে। ক্রিসেন্টের রপ্তানি আদেশের বিপরীতে জনতা ব্যাংক সব স্বীকৃতিপত্র কিনে গ্রাহককে (ক্রিসেন্ট) অর্থ পরিশোধ করে দেয়। এসব স্বীকৃতিপত্রের বিপরীতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রপ্তানি আয় দেশে না আসায় এখন জনতা ব্যাংক বিপাকে পড়েছে। যদিও ক্রিসেন্ট রপ্তানির বিপরীতে সরকারের দেওয়া নগদ সহায়তা ও স্বীকৃতিপত্রের পুরো অর্থ তুলে নিয়েছে। এসব কারণেই ব্যাংকটির বৈদেশিক মুদ্রার বড় দায় তৈরি হয়েছে।

জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্বে) আব্দুছ ছালাম আজাদ গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইমামগঞ্জ শাখার ওই গ্রাহকের মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ নিয়মিত করার চেষ্টা চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণের পুরোটাই নিয়মিত হয়ে যাবে। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক ও আমাদের নজরদারিতে আছে।’