রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমছেই

চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি

দেশের সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস শেষে রপ্তানিতে ২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। পরের দুই মাস শেষে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৮৪ এবং ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। তবে অর্থবছরের চার মাস বা জুলাই-অক্টোবর সময়ে ১ হাজার ১৫০ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ০৩ শতাংশ।
পণ্য রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এতে দেখা যায়, গত অক্টোবরে ২৮৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ৬ দশমিক ৪২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সেপ্টেম্বরে ২০৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি আয় হয়। তখন প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক, ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছরের জন্য পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার। সে হিসাবে অর্থবছরের প্রথম চার মাসের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১ হাজার ১৫৯ কোটি ডলার। তবে শেষ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫০ কোটি ডলার আয় হয়েছে, যা কিনা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পৌনে ১ শতাংশ কম।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত সেপ্টেম্বরের চেয়ে অক্টোবরে শীর্ষ রপ্তানি আয়ের খাত তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষিজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
যথারীতি শীর্ষ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় তৈরি পোশাক। মোট রপ্তানির ৮২ শতাংশ পোশাক খাত থেকে এসেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ৯৪৩ কোটি ৭৭ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের তিন মাস শেষে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। তার মানে, চার মাস শেষে এসে প্রবৃদ্ধি দশমিক ১৪ শতাংশ কমে গেছে।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে পোশাকের ক্রয়াদেশ সাধারণত কিছুটা কম থাকে। নভেম্বর থেকে ক্রয়াদেশ আবার বাড়তে থাকে। ফলে শিগগিরই পোশাক রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা ফিরে আসতে পারে।’
পোশাকের পর পণ্য রপ্তানি আয়ের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চামড়া খাত। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ৪২ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়া পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে আছে ৫ কোটি ৯৩ লাখ ডলারের চামড়া, ১৭ কোটি ডলারের চামড়া পণ্য ও ২০ কোটি ডলারের চামড়ার জুতা। আলোচ্য সময়ে চামড়া ও চামড়া পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক, শূন্য দশমিক ০২ শতাংশ।
পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি থেকে এসেছে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারের আয়। এর মধ্যে ৫ কোটি ডলারের কাঁচা পাট, ২২ কোটি ডলারের পাটসুতা এবং ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পাটের ব্যাগ রপ্তানি হয়। পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ ছাড়া আলোচ্য সময়ে ২২ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে ২০ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের চিংড়ি রপ্তানি হয়।
এ ছাড়া অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ২৬ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল, ২০ কোটি ডলারের কৃষিজাত পণ্য, ৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের প্রকৌশল পণ্য, ২ কোটি ৯৭ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য এবং ১ কোটি ৪১ ডলারের আসবাব রপ্তানি হয়েছে।