হোলসিমকে কিনতে 'দাম নিয়ে' বিপাকে লাফার্জ

সিমেন্ট খাতের কোম্পানি হোলসিম বাংলাদেশকে কিনতে নতুন করে জটিলতায় পড়েছে এ খাতের অপর কোম্পানি লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট। কারণ যে দামে দুই কোম্পানির মধ্যে কেনাবেচার দরদাম ঠিক হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক শেষ পর্যন্ত সেই দাম অনুমোদন করেনি। লাফার্জের পক্ষ থেকে দাম পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হলে সেটিও নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বাংলাদেশে লাফার্জ ও হোলসিমের একীভূত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে জটিলতা বাড়ল।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, হোলসিমকে কিনতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া দামেই কিনতে হবে। গত সেপ্টেম্বরে লাফার্জের পক্ষ থেকে হোলসিমকে কিনে নেওয়ার প্রস্তাবটি অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এ জন্য লাফার্জের পক্ষ থেকে যে দর প্রস্তাব করা হয়েছিল, তা কমিয়ে প্রায় অর্ধেক করে দেওয়া হয়।

দুই কোম্পানির মধ্যে দামের সমঝোতার ভিত্তিতে ১১ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮১ টাকা) ৯৪৭ কোটি টাকায় হোলসিমকে কেনার প্রস্তাব দেয় লাফার্জ। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এ দর কমিয়ে ৬ কোটি ২৫ লাখ ডলার নির্ধারণ করে। পরে লাফার্জের পক্ষ থেকে দর প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হয়। পাশাপাশি সময় বাড়ানোরও আবেদন করে লাফার্জ। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক লাফার্জের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন মাস সময় বাড়ালেও ক্রয়মূল্য বাড়ানোর পুনর্বিবেচনার আবেদনটি নাকচ করে দেয়। ৯ নভেম্বর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও লাফার্জ সুরমার কাছে পাঠানো চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে এ দামে বাংলাদেশে লাফার্জ-হোলসিম একীভূত হওয়া নিয়ে তৈরি সংকট আরও জটিলতার মুখে পড়ল। 

সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বরে লাফার্জ সুরমার পরিচালনা পর্ষদে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ১১ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮১ টাকা) ৯৪৭ কোটি টাকায় হোলসিমকে কিনে নেবে লাফার্জ। দুই কোম্পানির মধ্যে এ দামেই কেনাবেচার বনিবনা হয়েছিল। হোলসিমের সম্পদ ও দায়-দেনার বিশেষ নিরীক্ষার পর ওই মূল্য ঠিক করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ পাঠানোর আবেদন করলে হোলসিমের শেয়ারের দাম পুনর্বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কেনাবেচার জন্য হোলসিমের প্রতিটি ১০০ টাকা মূল্যমানের শেয়ারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৬ হাজার টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক যাচাই-বাছাই করে ১০০ টাকা মূল্যমানের শেয়ারের বিক্রয়মূল্য ঠিক করে ৫৭ হাজার টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, দুই কোম্পানি মিলে যে দাম ঠিক করেছিল তা ‘অতিমূল্যায়িত’। তাতে বৈধ পথে বাংলাদেশ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ বিদেশিদের হাতে চলে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক তার আইনি ক্ষমতাবলে দাম পুনর্নির্ধারণ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনের ক্ষমতাবলে ‘বাজারভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি’ অনুসরণ করে দাম পুনর্নির্ধারণ করে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ৪ ও ১২ অক্টোবর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড এবং ৩ ও ১১ অক্টোবর লাফার্জ সুরমা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পুরো শেয়ারের দাম পুনর্বিবেচনা করে ৯৪৭ কোটি টাকা করার দাবি জানায়। একই চিঠিতে অনুমতিপত্রের মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। ৯ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়ে দেয়, ১০০ টাকা শেয়ারের দাম ৫৭ হাজার ২০২ টাকায় ধরে হোলসিমের দাম ৫০৪ কোটি ৭৮ লাখ ১৯ হাজার ৯৪০ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে লাফার্জ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে ইমপেক্ট পিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, লাফার্জ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেবে না।

এর আগে ২০১৪ সালের এপ্রিলে বৈশ্বিকভাবে লাফার্জ ও হোলসিম একীভূত হওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। সেই অনুযায়ী, বৈশ্বিকভাবে কোম্পানি দুটির একীভূত কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। ফলে বিশ্বের সিমেন্ট খাতে জায়ান্ট দুই কোম্পানি এক ছাতার নিচে এসে ‘লাফার্জহোলসিম’ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এতে দুই কোম্পানি মিলে হয়ে যায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় সিমেন্ট কোম্পানি।

বৈশ্বিকভাবে একীভূত হওয়ার পর বাংলাদেশেও কোম্পানি দুটি একীভূতকরণের বিষয়টি সামনে আসে। কারণ, এ দেশেও দুই কোম্পানির আলাদা কার্যক্রম ছিল। এর মধ্যে লাফার্জ সুরমা বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলেও হোলসিম তালিকাভুক্ত নয়। তাই বৈশ্বিকভাবে একীভূত হওয়া লাফার্জহোলসিম গ্রুপ থেকে হোলসিম বাংলাদেশের সব শেয়ার কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় লাফার্জ।