বিকাশকে কেন জরিমানা নয় জানতে চেয়ে চিঠি

বাংলাদেশে মুঠোফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবাদাতা শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বিকাশকে কেন জরিমানা করা হবে না জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ, প্রতিষ্ঠানটি অর্থ লেনদেনে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ৫০ এজেন্ট ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রাহকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এসব এজেন্ট ও গ্রাহকের বিরুদ্ধে অনিয়মের সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে। তাই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত এজেন্ট ও গ্রাহকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিএফআইইউ এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা বিকাশ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট তথ্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগেও (সিআইডি) পাঠানো হয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধ হুন্ডি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারায় বিকাশের ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। পাশাপাশি জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সিআইডিকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিকাশের বেশ কিছু এজেন্ট ও গ্রাহকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দিয়েছে। আমরা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব। এ নিয়ে আমাদের তদন্ত চলমান আছে। শিগগির মামলা দায়ের হবে।’

বিএফআইইউর পক্ষ থেকে পাঁচ ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বিকাশ কর্তৃপক্ষকে। সেখানে ৫০ জন এজেন্টকে চিহ্নিত করে বলা হয়েছে, এসব এজেন্ট টাকা জমার সময় অর্থ প্রেরণকারীর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে না। তারপরও বিকাশ এসব এজেন্টের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ অপরাধে আইন অনুযায়ী বিকাশকে প্রতিদিনের জন্য ১০ হাজার ও সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা যায়।

অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে কেন বিকাশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছে বিএফআইইউ। বিএফআইইউ চিঠিতে ০১৭১৮৭৫৯৫১২ নম্বর উল্লেখ করে আরও বলেছে, এই ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদেশ থেকে অর্থ সংগ্রহের প্রলোভন দিচ্ছেন। এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরও তা সন্দেহজনক লেনদেন হিসেবে চিহ্নিত করেনি বিকাশ কর্তৃপক্ষ। আইন অনুযায়ী এ জন্য ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করতে পারে বিএফআইইউ। এ ছাড়া একই পরিচয়পত্রে একাধিক ব্যক্তিগত হিসাব পরিচালনা করা এজেন্টদের হিসাব ১০ দিনের মধ্যে বন্ধ করতে বলা হয়েছে। এভাবে তিন লাখের বেশি হিসাব পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া যেসব হিসাবে শতভাগ টাকা জমা হয়, গভীর রাতে লেনদেন হয় ও এক মিনিটে তিন-চারটি লেনদেন হয়, এসব হিসাবের তথ্য সন্দেহজনক লেনদেন হিসেবে জানাতে বিকাশকে চিঠি দিয়েছিল বিএফআইইউ। এখন এসব হিসাব বন্ধে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা দাখিল করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি এজেন্ট ও পরিবেশক পর্যায়ে বিকাশের তদারকি বাড়াতে বলেছে বিএফআইইউ।

বিকাশের করপোরেট কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিএফআইইউ আমাদের চিঠি দিয়েছে। যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে তা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানো হবে।’

এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিকাশের ২ হাজার ৮৮৭টি এজেন্টের কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশ দেয় বিএফআইইউ। একই সঙ্গে ১ হাজার ৮৬৩টি এজেন্ট হিসাব বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। অবৈধভাবে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) বিতরণের সঙ্গে যুক্ত ছিল এসব হিসাব। অবৈধভাবে বিকাশের মাধ্যমে দেশে প্রবাসী আয় আসায় সার্বিকভাবে তা বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশ ব্যাংক অবৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা বন্ধে সচেষ্ট হওয়ার ফলে গত অক্টোবরে প্রবাসী আয় আগের মাসের চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেড়েছে।