বেড়েই চলেছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের শেয়ারের দাম

ক্রমাগত লোকসানে থাকা জেড ক্যাটাগরির আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দর গত এক মাসে বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ।
ক্রমাগত লোকসানে থাকা জেড ক্যাটাগরির আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দর গত এক মাসে বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ।

ক্রমাগত লোকসানে থাকা জেড ক্যাটাগরির আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের শেয়ারের দর গত এক মাসে প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই রকম অবস্থায় থাকা কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম সাধারণত বৃদ্ধি পায় না। তবে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য বা গুজব থাকলে চাহিদা বাড়ে, সেই সঙ্গে দাম বাড়ে।

গত এক মাসে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩ টাকা। এক মাস আগে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ৫ টাকা ১০ পয়সা। আজ রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম গতকালের চেয়ে বৃদ্ধি পায় প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ (৭০ পয়সা)। লেনদেন শেষে দাম হয়েছে ৮ টাকা ১০ পয়সা।

সম্প্রতি কোনো কারণ ছাড়াই শেয়ারের দর অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) জানিয়েছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বেশ কিছুদিন ধরে এ কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকার বিষয়টি ডিএসইর নজরে আসে। অস্বাভাবিক দর বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে কোম্পানিটিকে নোটিশ দেয় ডিএসই। নোটিশের জবাবে কোম্পানিটি ডিএসইকে জানিয়েছে, কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই তাদের শেয়ারের দর অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ হেলাল বলেন, মৌলভিত্তির কারণে এই শেয়ারের দাম বাড়তে পারে না। কোম্পানির কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য থাকতে পারে। তবে খোলাখুলিভাবে যেহেতু তা বলা হচ্ছে না। তাই একটা কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে কোনো গুজবের কারণেই এই কোম্পানির শেয়ারের চাহিদা বেড়েছে। আর চাহিদা বাড়ানোর কারণে দাম বাড়ছে। গুজব কি না, তা সময়ই বলে দেবে।

প্রায় এক দশক ধরে লোকসানে রয়েছে কোম্পানিটি। ডিএসইর ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সাল শেষে কোম্পানিটির লোকসানের পরিমাণ ছিল ১৪ কোটি টাকা। গত বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে ২৮ কোটি টাকা। সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৪০ পয়সা। অর্ধবার্ষিকে (জানুয়ারি-জুন) শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ২৭ পয়সা। গত তিন বছর ধরে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। কোনো কোম্পানি যদি বছর শেষে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে না পারে, তাহলে কোম্পানিটিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেওয়া হয়।

আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ১৯৮৭ সালের ২০ মে আল-বারাকা ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড নামে কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৪ সালে মালিকানা পরিবর্তন হওয়ার পর ওরিয়েন্টাল ব্যাংক লিমিটেড নামে কার্যক্রম চালায় ব্যাংকটি। মালিকানা হস্তান্তরের পর পরই ওরিয়েন্টাল ব্যাংকে শুরু হয় নজিরবিহীন লুটপাট। বাংলাদেশ ব্যাংক পরে এতে প্রশাসক বসায়। কিন্তু তারল্য সংকটের কারণে ওই সময় ব্যাংকটি থেকে টাকা তুলতে পারছিলেন না আমানতকারীরা। সরকার এরপর আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে ২০০৭ সালে একটি স্কিম চালু করে। পরবর্তী সময়ে ব্যাংকটির বেশির ভাগ শেয়ার বিক্রির জন্য নিলাম ডাকা হলে তা কিনে নেয় সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ এজি। এরপর ২০০৮ সালে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের সব সম্পত্তি ও দায় নিয়ে নতুন নামে যাত্রা শুরু করে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।

এদিকে আজও সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন শেষ হয়েছে দেশের দুই শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)। ডিএসইতে আজ লেনদেন শেষে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৪ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট, অবস্থান করছে ৬৩৩৬ পয়েন্টে। মোট লেনদেন হয়েছে ৭৯০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। হাতবদল হওয়া শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৭০টির, কমেছে ১১৩টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৪৫টির দর।

ডিএসইতে আজ দরবৃদ্ধির শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হলো ইস্টার্ন কেব্‌লস লিমিটেড, পদ্মা লাইফ ইনস্যুরেন্স, রেনউইক, ফার্মা এইড, ওয়াটা কেমিক্যাল, ন্যাশনাল টিউবস, ওসমানিয়া গ্যালভানাইজিং, ডেসকো, প্রাইম টেক্সটাইল ও আনলিমা ইয়ার্ন।

আজ লেনদেনের শীর্ষে ছিল, এবি ব্যাংক লিমিটেড, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, বিডি থাই, সিটি ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল টিউবস, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, ফাস ফাইন্যান্স, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড ও গোল্ডেন হারভেস্ট।

অন্যদিকে, সিএসইতে আজ সার্বিক সূচক বেড়েছে ৩০ দশমিক ২৮ পয়েন্ট। মোট লেনদেনের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৩৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। হাতবদল হওয়া শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১১৮টির, কমেছে ৯৭টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৩২টির।