সংকট কাটাতে পরিচালকদের আমানত রাখার নির্দেশ
ব্যাংক চালাতে দৈনিক যে পরিমাণ টাকা প্রয়োজন, তা হাতে নেই ফারমার্স ব্যাংকের। আবার অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ ও গ্রাহক থেকে আমানতও পাচ্ছে না ব্যাংকটি। এ সংকট মেটাতে ব্যাংকটির পুনর্গঠিত পর্ষদকে আমানত হিসাবে টাকা জমা করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি পরিচালকদের আমানত সংগ্রহের জন্য সক্রিয় হতে বলেছে। তারল্য ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে ব্যাংকটিকে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো অর্থ সহায়তা দেবে না বলে ব্যাংকটিকে জানিয়ে দিয়েছে।
ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে গত সোমবার পদত্যাগ করেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। এরপর পর্ষদ পুনর্গঠিত হয়। গতকাল বুধবার পুনর্গঠিত সেই পর্ষদকে ডেকে নানা নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সভায় উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা সূত্রে এসব বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সভায় গভর্নর ফজলে কবিরসহ সব ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে আবদুল হাই বাচ্চুর পদত্যাগের পর বেসিক ব্যাংকের পুনর্গঠিত পর্ষদকে একইভাবে নির্দেশনা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফারমার্স ব্যাংকের পক্ষে নতুন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাসুদ, ভাইস চেয়ারম্যান মারুফ আলম, সদ্য পদত্যাগ করা ভাইস চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালক মো. আতাহার উদ্দিন, পরিচালক তাজনীন আমানসহ অন্য পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ব্যাংকটিতে নিয়োগ পাওয়া নতুন উপদেষ্টা প্রদীপ কুমার দত্ত ও ব্যাংকটির সাবেক পরিচালক চৌধুরী নাফিজ শরাফত তাঁদের সঙ্গে থাকলেও সভায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাননি।
সভা সূত্র জানায়, নতুন চেয়ারম্যানসহ অন্য পরিচালকেরা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানায়, আগের চেয়ারম্যানের কারণে তাঁদের ভূমিকা রাখার সুযোগ ছিল না। তারল্য পরিস্থিতির উন্নয়নে পরিকল্পনা উপস্থাপন করে পর্ষদ সদস্যরা জানান, সব কর্মকর্তাকে আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হবে। ঋণ আদায়ের জন্যও কর্মকর্তাদের সক্রিয় করা হবে। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুধু কর্মকর্তাদের লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে পরিস্থিতি উন্নতি করা সম্ভব নয়। আশু পদক্ষেপ হিসেবে সব পরিচালককে আমানত দিতে বলা হয়। পাশাপাশি পরিচালকদের আমানত সংগ্রহে ও ঋণ আদায়ে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া খরচ কমিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
সভা শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দেওয়া হয় পদত্যাগ করা ভাইস চেয়ারম্যান আতাহার উদ্দিনকে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছে। আমরা নিজেরা অর্থ জমা দেব। বন্ড ছেড়ে তারল্য সংকট মেটানো হবে। নতুন বোর্ডের সবাই কাজ করছেন, সবার বাসায় বাসায় যাওয়া হবে টাকা আদায়ের জন্য।’
আগের পর্ষদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে আতাহার উদ্দিন বলেন, ‘আগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কিছু নেই। আমাদের দায়িত্বেও কোনো ঘাটতি ছিল না। বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন। সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের তিন মাস সময় দিয়েছে।’
সভা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, ব্যাংকটির পুনর্গঠিত কমিটির সঙ্গে সভা হয়েছে। তারল্য ঘাটতি উন্নয়নে পরিচালকদের তাগাদা দেওয়া হয়েছে। নিজেদের অর্থ জমা রাখার জন্য বলা হয়েছে। ঋণ আদায় কার্যক্রম জোরদার করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, এমন উদ্যোগ হলে ব্যাংকটি ভালো করবে।