মাসে ২ শতাংশ সুদ দিয়ে রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে

শেষ হলো ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়। শেষ দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত করদাতারা বিভিন্ন কর কার্যালয়ে গিয়ে রিটার্ন জমা দেন। দিনজুড়েই বিভিন্ন কর কার্যালয়ে ছিল বেশ ভিড়। 

তবে যাঁরা নির্ধারিত সময়ে রিটার্ন দিতে পারেননি, তাঁদের সব শেষ হয়ে গেল, তা নয়। নির্ধারিত করের ওপর মাসে ২ শতাংশ হারে সুদ দিলেই কর কর্মকর্তারা রিটার্ন জমা নিয়ে নেবেন। 

এখন কর বিবরণী জমার সময় আর বাড়ানো হয় না। জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত রিটার্ন জমার নির্ধারিত সময়। আগে এই সময় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকলেও প্রতিবারই এক বা একাধিকবার সময় বৃদ্ধি করতে হতো। গত বছর থেকে সময় বৃদ্ধির সুযোগটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই বিকল্প হিসেবে করের ওপর সুদ বসানোর বিধান করা হয়েছে। 

৩০ নভেম্বরের পর বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দিলে নির্ধারিত করের ওপর সুদ দিতে হবে—গত অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশে ৭৩এ নামে এ–সংক্রান্ত নতুন একটি ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ে কোনো করদাতা বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দিতে ব্যর্থ হলে ওই ব্যক্তির করের ওপর মাসিক ২ শতাংশ হারে বিলম্ব সুদ দিতে হবে। তবে সুদ নির্ধারণ হবে সারা বছরে ওই করদাতা যে উৎসে কর ও অগ্রিম কর দিয়েছেন, তা বাদ দিয়ে আয়করের ওপর। তবে বিলম্ব সুদ দিয়ে রিটার্ন দিতে হলে করদাতাকে যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে আবেদন করতে হবে।

সরেজমিনে কর কার্যালয় 
গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকেই বিভিন্ন কর কার্যালয়ে করদাতাদের বেশ ভিড়। বিশেষ করে কর অঞ্চল-১, কর অঞ্চল-৬, কর অঞ্চল-৭ ও কর অঞ্চল-১১–এ বেশি ভিড় লক্ষ করা গেছে। অনেকেই কর কার্যালয়ে এসে নিজের রিটার্ন ফরম পূরণ করে তা জমা দিয়েছেন। আবার অনেকেই বাড়ি থেকে রিটার্ন ফরম পূরণ করে এনে জমা দিয়েছেন। অনেকে নতুন ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) নিতে এসেছেন। আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে সব কাজ শেষ করতে পেরেছেন করদাতারা। 

মহাখালীর আরজতপাড়ার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মামুন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মামুন গতকাল দুপুরে কর অঞ্চল-৭–এ রিটার্ন জমা দিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রিটার্ন দিতে কোনো সমস্যা হয়নি। রিটার্ন জমার বুথ আরও চার-পাঁচটি বৃদ্ধি করলে আরও কম সময় লাগত। 

এদিকে গতকাল জাতীয় আয়কর দিবস পালন করেছে এনবিআর। দিবসটি উপলক্ষে সকালে সেগুনবাগিচার এনবিআর ভবনের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি এনবিআর ভবন থেকে শুরু হয়ে মৎস্য ভবন, হাইকোর্ট, প্রেসক্লাব হয়ে এনবিআর ভবনে এসে শেষ হয়। এতে নেতৃত্ব দেন এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার লোকেরা শোভাযাত্রায় অংশ নেন। 

গতকাল পর্যন্ত কতজন করদাতা রিটার্ন দিয়েছেন, এর চূড়ান্ত হিসাব এখনো করেনি এনবিআর। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ১১ লাখ ১৬ হাজার করদাতা তাঁদের রিটার্ন জমা দিয়েছেন। রিটার্ন জমার সংখ্যা গতবারের একই সময়ের চেয়ে ৩ লাখ ৬০ হাজার বেশি। এনবিআরের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করছেন, এবার ২০ লাখের মতো রিটার্ন জমা পড়বে। গতবার সাড়ে ১৫ লাখ রিটার্ন জমা পড়েছিল। 

উল্লেখ্য, বর্তমানে ৩২ লাখের বেশি কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। এবার বেশি রিটার্ন জমা পড়ার কারণ, এবারই প্রথমবারের মতো বেসরকারি চাকরিজীবীদের রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।