করসেবা পেতে বেশি সময় লাগে বাংলাদেশে

করসংক্রান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে বাংলাদেশে। এ দেশে একটি প্রতিষ্ঠানকে কর–বিষয়ক কার্যক্রম শেষ করতে গড়ে ৪৩৫ ঘণ্টা ব্যয় করতে হয়। সার্বিকভাবে করবান্ধব বা কর প্রদান সূচকে বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২তম। আগের বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫১তম।

উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বিশ্বব্যাংক ও বহুজাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারসের (পিডব্লিউসি) ‘পেয়িং ট্যাক্স ২০১৮’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। একটি দেশে নতুন বছরে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে কর হার কতটা সহায়ক হলো, তার একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরতেই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে একটি দেশের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে ও কোনো প্রক্রিয়ায় কর দেয়, এ নিয়ে সূচক প্রকাশ করা হয়েছে। তা ছাড়া এতে বিভিন্ন দেশের গড় কর হার, কত ধরনের কর দিতে হয় ইত্যাদি তথ্যও সংযোজিত হয়েছে। সার্বিকভাবে ব্যবসা করার পরিবেশ কতটা করবান্ধব, তা নিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে তুলনা করা হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনটি সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কর হার সূচকে বাংলাদেশ চতুর্থ। বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক বা করপোরেট কর, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট)সহ সব মিলিয়ে গড় কর হার ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে মুনাফায় কর গড়ে ৩১ শতাংশ; বাকিটা মূল্য সংযোজন কর। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি কর হার আফগানিস্তানে, ৭১ দশমিক ৪ শতাংশ। ভারত ও শ্রীলঙ্কায় কর হার গড়ে ৫৫ শতাংশ। ভারতে করপোরেট কর হার গড়ে সাড়ে ২৩ শতাংশ হলেও ২০ শতাংশ শ্রম কর বা লেবার ট্যাক্স ও ১১ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) দিতে হয়। প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

একটি করদাতা প্রতিষ্ঠানের কর-সংক্রান্ত বিবরণ জমা থেকে শুরু করে করের টাকা পরিশোধে কত সময় লাগে, তার তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশে এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করতে গড়ে ৪৩৫ ঘণ্টা সময় লাগে। সবচেয়ে কম সময় লাগে ভুটানে; ৮৫ ঘণ্টা। করসংক্রান্ত কাজ সম্পন্ন করতে ভারতে ২১৪ ঘণ্টা, পাকিস্তানে ৩১২ ঘণ্টা ও শ্রীলঙ্কায় ১৬৮ ঘণ্টা করে সময় লাগে। তবে যেসব দেশ স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করতে পেরেছে, সেসব দেশে তুলনামূলক কম সময় লাগে। সূচকে শীর্ষে থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতে করসংক্রান্ত কাজ শেষ করতে সময় লাগে মাত্র ১২ ঘণ্টা।

বিশ্বব্যাংক ও পিডব্লিউসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে একজন করদাতার ওপর ৩৩ ধরনের কর আরোপ আছে। তবে এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান কিছুটা ভালো। এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় সবচেয়ে বেশি বা ৪৭ ধরনের কর আরোপ হয়। ভারতে ১৩ ধরনের কর আছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছে মাত্র ৪ ধরনের কর। সেখানে কোনো প্রতিষ্ঠানের মুনাফার ওপর কর দিতে হয় না।

করবান্ধব দেশ হিসেবে তালিকার প্রথম তিনটি দেশই এশিয়ার। শীর্ষ স্থানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে আছে কাতার। তৃতীয় স্থানে আছে হংকং। শীর্ষ দশে থাকা পরের দেশগুলো হলো যথাক্রমে আয়ারল্যান্ড, বাহরাইন, কুয়েত, সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক, নিউজিল্যান্ড ও মরিশাস। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এ সূচকে ৩৬তম। যুক্তরাষ্ট্রে সব মিলিয়ে কর হার গড়ে ৪৪ শতাংশ। এর মধ্যে করপোরেট কর বা মুনাফায় করের হার গড়ে ২৮ শতাংশ। সূচকে এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ চীনের অবস্থান ১৩০তম। দেশটিতে সব মিলিয়ে কর হার গড়ে ৬৭ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে দেশটিতে করপোরেট কর হার তুলনামূলক কম, ১১ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব (শুল্কসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও চুক্তি) এহতেশামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি করতে স্বয়ংক্রিয় কর প্রদান ব্যবস্থা চালুসহ বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে কর সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের দৃশ্যমান উন্নতি হবে।