আরও দুর্মূল্য পেঁয়াজ

রাজধানীর বাজারে আরও দুর্মূল্য হয়ে উঠেছে পেঁয়াজ। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দামের লাগামে টান পড়ছে না। কোনো কোনো খুচরা বাজারে এক দিনেই কেজিতে ২০ টাকা দাম বেড়ে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকায়, ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০ টাকায় উঠেছে।

মাছ, মুরগি, ডিম ও সবজির দাম কমায় ক্রেতাদের কিছুটা স্বস্তি এলেও তা আবার দূর হয়ে যাচ্ছে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে। অথচ গত বছর এ সময়ে পেঁয়াজের দাম ছিল এখনকার তিন ভাগের এক ভাগ। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, গত বছর এ সময়ে ভারতীয় ও দেশি পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দাম ছিল ২৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনতে এখন নগরবাসীর খরচ বেড়েছে তিন গুণ বা তারও বেশি।

মাছ, মাংস, সবজি রান্না করতে পেঁয়াজ লাগবেই। তাই দাম যতই হোক, ক্রেতাদের পেঁয়াজ কিনতেই হয়। কাজীপাড়া বাজার থেকে মো. আসাদুজ্জামানকেও গতকাল পেঁয়াজ কিনতে হলো। এক কেজি দেশি পেঁয়াজ কিনলেন ১১০ টাকায়। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পেঁয়াজ খেতে হয়। ব্যবসায়ীরা এর সাজা আমাদের দিচ্ছেন। নইলে দেশি পেঁয়াজের দাম এত বেশি হবে কেন?’

কাজীপাড়া থেকে কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেল পেঁয়াজের দাম আরও বেশি। দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১২০ টাকা এবং ভারতীয় দুই ধরনের পেঁয়াজ ৯০ টাকা চাইছেন খুচরা বিক্রেতারা। পাইকারি দোকানে দেশি পেঁয়াজ প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) ৫৫০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি কেজি ১১০ টাকা। অন্যদিকে ভারতীয় নতুন মৌসুমের পেঁয়াজের পাইকারি দর কেজিপ্রতি ৭৪ টাকা ও পুরোনোটি ৮০ টাকা।

ভারত রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতি টন পেঁয়াজের ন্যূনতম দর ৮৫০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করেছে গত নভেম্বর মাসে। এটা না হয় ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ। কিন্তু দেশি পেঁয়াজের দাম এত বেশি কেন? জবাবে কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. আলাউদ্দিন বলেন, এখন মৌসুমের শেষ সময়। পেঁয়াজের মজুত ফুরিয়ে এসেছে। হাটে এক মণ পেঁয়াজ উঠলে তা কিনতে ফড়িয়া যায় ১০ জন। দর-কষাকষিতে দাম বেড়ে যায়।

বছরের এ সময়ে সাধারণত নতুন মৌসুমের মুড়িকাটা পেঁয়াজ ওঠে। দুই মাসের চাহিদা পূরণ হয় এ পেঁয়াজ দিয়েই। কিন্তু এবার সে পেঁয়াজের দেখা মিলছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার বৃষ্টিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ পিছিয়েছে।

পেঁয়াজ ও চাল বাদে অন্যান্য পণ্যের দামে কিছু স্বস্তি এসেছে। সবজির দামও কিছু কমেছে। বিভিন্ন ধরনের সবজি পাওয়া যাচ্ছে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। মাসখানেক আগেও যা ৫০ থেকে ৮০ টাকা ছিল। সম্প্রতি ফার্মের মুরগির ডিম ও মুরগির দামও কমেছে। বড় বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের লাল ডিম ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অবশ্য হাঁসের ডিমের হালি ৪৫ টাকা। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১২০ টাকা হয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে ডিম ও মুরগির সরবরাহ বেশ ভালো। এ ছাড়া খাল-বিল শুকাতে শুরু করায় দেশি মাছ ধরা পড়ছে। এতে দামও কিছুটা কমেছে।

বাজারে দেশি কই, শিং, মাগুর, শোল, পুঁটি, মেনি, খলিশা, টাকি, ফলি ইত্যাদি মাছ পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য বাজার ও আকারভেদে দামের পার্থক্য আছে। দেশি কই আকারে বড় হলে দেড় হাজার টাকা কেজি হাঁকছেন বিক্রেতারা। কিন্তু ছোট কই ৪০০ টাকা। বড় আকারের শোল মাছের কেজি ৬০০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা। তবে মাঝারি শোলের কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা।

ঢাকার বাজারে আমন মৌসুমের নতুন চাল এখনো উঠতে শুরু করেনি। দামও আগের মতোই আছে। প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৪-৪৫ টাকা, মাঝারি চাল ৫৩-৫৫ টাকা এবং সরু মিনিকেট চাল মানভেদে ৫৮-৬০ টাকা।