চার পয়সা আয়ে ৪০ টাকা শেয়ারের দাম!

মানের দিক থেকে নিম্ন। নিবন্ধিত ‘বি’ শ্রেণিতে। বছর শেষের ঘোষিত লভ্যাংশ মাত্র ২ শতাংশ। তিন মাসের আয় মাত্র ৪ পয়সা। অথচ সেই কোম্পানিই মূল্যবৃদ্ধিতে উঠে এসেছে সবার শীর্ষে। এমনটিই ঘটেছে গতকাল বুধবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। এদিন ডিএসইতে ভালো সব কোম্পানিকে পেছনে ফেলে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল ফাইন ফুডস।

গত জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছরে শেয়ারধারীদের জন্য ২ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ফাইন ফুডস। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস ছিল মাত্র ৪ পয়সা। ডিএসইতে গতকাল সেই কোম্পানির শেয়ারের দাম এক দিনেই প্রায় ৩ টাকা বা ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ টাকায়। ২০১৬ সালের অর্থাৎ গত বছরের শুরুতেও কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ১০ টাকা অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালুর নিচে। ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১০ টাকার নিচেই লেনদেন হয় এ শেয়ার। বছর না ঘুরতেই তা এখন অভিহিত মূল্যের চার গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

এক বছরের ব্যবধানে শেয়ারের দামের ব্যাপক তারতম্য ঘটলেও এ সময়ে কোম্পানির আর্থিক অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি ঘটেনি। ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনা করেই এ চিত্র পাওয়া গেছে। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন-এই এক বছরে কোম্পানি যে ব্যবসা করেছে তাতে বছর শেষে এটির ইপিএস দাঁড়ায় প্রায় ৬৫ পয়সা। আগের বছর এ ইপিএস ছিল প্রায় ৮২ পয়সা। সেই হিসাবে কোম্পানিটির আয় কমেছে। কিন্তু শেয়ারের দামে তার কোনো প্রভাব নেই। আয় কমলেও বাজারে এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী।

ফাইন ফুডসের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদনটি ছিল গত জুলাই-সেপ্টেম্বরের। সেখানেও এটির ইপিএস আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে। গত জুলাই-সেপ্টেম্বরের ইপিএসের ভিত্তিতে গতকাল দিন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩৩-এ। বিপজ্জনক মূল্য আয়ের কোম্পানি এখন ফাইন ফুডস।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত যেকোনো কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ফাইন ফুডসের উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে মাত্র ১ শতাংশের মতো শেয়ার। সিংহভাগ শেয়ারই রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে।

২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে কারসাজির একাধিক ঘটনা তদন্তে বেরিয়ে আসে। বেনামে কোম্পানির শেয়ার কিনে কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়ানোর সঙ্গে কোম্পানির উদ্যোক্তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি সামনে আসে। এখন এসে আবারও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি তাই বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

জানতে চাইলে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষক মোহাম্মদ মুসা বলেন, একমাত্র কারসাজি ছাড়া এ কোম্পানির শেয়ারের এমন মূল্যবৃদ্ধির আর কোনো কারণ নেই। কোম্পানিটির অতীত ইতিহাস জানলে কোনো বিনিয়োগকারীর উচিত না এ শেয়ারে বিনিয়োগ করা। কোম্পানিটির উদ্যোক্তারাই হয়তো বেনামে কম দামে শেয়ার কিনে গুজব ছড়িয়ে দাম বাড়িয়ে শেয়ার বিক্রির ঘটনা ঘটাচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত তদন্ত করে মূল্যবৃদ্ধির পেছনের কারণ খুঁজে দেখা।

দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে গতকাল দরপতন ঘটেছে। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ২৮ পয়েন্ট কমেছে। লেনদেন আগের দিনের চেয়ে ৩৭ কোটি টাকা কমে নেমে এসেছে ৪০৭ কোটি টাকায়। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি কমেছে প্রায় ৯৫ পয়েন্ট। চট্টগ্রামের বাজারে গতকাল দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩০ কোটি টাকা, যা আগের দিনের প্রায় সমপরিমাণ।