এবারও সমঝোতার কমিটি!

তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সাধারণ সদস্যরা নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য গতবারের মতো এবারও ভোট দেওয়ার সুযোগ না-ও পেতে পারেন। কারণ, নেতা বাছাইয়ে সমঝোতার পথেই হাঁটছে সংগঠনটির দুই পক্ষ—সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম।

বিজিএমইএর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংগঠনটির সাবেক সভাপতিরা সম্প্রতি বৈঠক করে সমঝোতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়ে একমত হয়েছেন। এবার সভাপতির পদটি পাচ্ছে ফোরাম। একই সঙ্গে সাতটি সহসভাপতি ও ২৭টি পরিচালক পদ উভয় পক্ষের মধ্যে ভাগাভাগি হবে। সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের নেতারা যাঁদের সবুজ সংকেত দেবেন, কেবল তাঁরাই মনোনয়নপত্র কিনবেন ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন।

তবে সমঝোতার বিষয়টি ২০১৫ সালেই চূড়ান্ত হয়েছিল। সে বছর সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের জ্যেষ্ঠ নেতারা দুই মেয়াদের জন্য বিজিএমইএর নেতৃত্ব ভাগাভাগির বিষয়ে চুক্তি করেন। এ জন্য প্রথম মেয়াদে সম্মিলিত পরিষদ সভাপতি ও চারটি সহসভাপতির পদ পায়। সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী, এবার দ্বিতীয় মেয়াদে সমানসংখ্যক পদ পাবে ফোরাম। অবশ্য এর পরের মেয়াদে পরিষদ ও ফোরাম এক হয়ে যাবে—এমনটাই রয়েছে চুক্তিতে।

সংগঠনটির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত ২১ সেপ্টেম্বর। তবে উত্তরায় বিজিএমইএর নতুন ভবন নির্মাণকে পুঁজি করে ছয় মাস মেয়াদ বাড়িয়ে নেন সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। আগামী মার্চে বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। তবে বিজিএমইএর একাধিক নেতা জানান, ফোরাম ও পরিষদের সমঝোতা ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কারণ, সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান আরেক মেয়াদে সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। তবে সাবেক সভাপতিরা তাতে সায় দেননি। তারপরই ২০১৭-১৮ মেয়াদে বিজিএমইএর নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য গত সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী ৭ মার্চ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

জানতে চাইলে সম্মিলিত পরিষদের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বর্তমান সভাপতি আরেক মেয়াদ থাকলে অন্যায় হতো। কারণ, দুই বছর আগে আমরা ফোরামের নেতাদের কথা দিয়েছি। সেই প্রক্রিয়ায় প্রয়াত মেয়র ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনিসুল হক জড়িত ছিলেন। তাঁর প্রতি সম্মান দেখানো উচিত।’

ফোরামের সভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ গত রোববার বলেন, ‘ফোরামের পক্ষ থেকে আমরা রুপা সোয়েটারের মো. শহীদুল ইসলামকে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছি। তবে এখনো সহসভাপতি পদের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি।’ সমঝোতা ভেস্তে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক কথাই তো শোনা যায়। কিন্তু এবারের নেতৃত্ব ভাগাভাগির বিষয়টি আগেই চূড়ান্ত ছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফোরামের সভাপতি পদের জন্য সংগঠনের বর্তমান সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নাম চূড়ান্ত ছিল। তবে তিনি বিএনপির সমর্থক বলে পরিচিত হওয়ায় সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সবুজ সংকেত পাননি। পরে সভাপতি পদের জন্য শহীদুল ইসলামের নাম দেন ফোরামের নেতারা। তিনি ২০০৬ ও ২০০৮ সালে বিজিএমইএর সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাঁর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পরিষদের কয়েকজন নেতা। তখন বিকল্প হিসেবে মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজের নাম আসে। তবে শেষ পর্যন্ত শহীদুল ইসলামের নামই চূড়ান্ত হয়।

অবশ্য সম্মিলিত পরিষদের নেতা ও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোশাকশিল্পের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার জন্যই উভয় পক্ষের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল। তবে শহীদুল ইসলামের সক্ষমতা নিয়ে সাধারণ সদস্যদের মধ্যে কিছুটা মতভেদ আছে।’

সর্বশেষ ২০১৩ সালে বিজিএমইএর সাধারণ সদস্যরা ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করেছিলেন। সেবার পরিষদের আতিকুল ইসলাম ১ হাজার ৭০০ ভোট পেয়ে সভাপতি হন। ফোরামের দলনেতা মাহমুদ হাসান খান পেয়েছিলেন ১ হাজার ৩৭৭ ভোট। এদিকে নেতা নির্বাচনে ভোটের অধিকার হারিয়ে সংগঠনটির অনেক সদস্যই ক্ষুব্ধ। তেমনি একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমানে নির্দিষ্ট বলয়ের বাইরে কেউ বিজিএমইএর নেতা হতে পারেন না। আর নির্বাচন ছাড়া নেতা হওয়ায় জবাবদিহির কোনো জায়গা নেই। এতে করে পোশাকশিল্পই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।