আস্থা শেয়ারবাজারে, শঙ্কা চীনের ঋণ

ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় বিশ্ব শেয়ারবাজার। ছবি: রয়টার্স
ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় বিশ্ব শেয়ারবাজার। ছবি: রয়টার্স

আরেকটি বছর অতীত হলো। ঘণ্টা বাজছে নতুনের আগমনের। চলছে বিশ্লেষণ, কেমন গেল বছরটি, নতুনে আসবে কেমন পরিবর্তন। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ বলছে, বিদায়ী বছরটি অপ্রত্যাশিতভাবে বেশ ভালো ছিল অর্থনীতির জন্য। বছরটিতে আশঙ্কাজনক অনেক পরিস্থিতিতে এসেছে স্থিতিশীলতা। বিশ্ব শেয়ারবাজার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট), ইউরোজোন পরিস্থিতি বেশ স্থিতিশীল ছিল বছরজুড়ে।

গার্ডিয়ান বছর হাতড়ে অর্থনীতির আলোচিত যে দিকগুলো তুলে ধরেছে, তা হলো—

ঊর্ধ্বমুখী বিশ্ব শেয়ারবাজার: বিদায়ী বছরটিতে ঊর্ধ্বমুখী ছিল বিশ্ব শেয়ারবাজার। বিশ্ব পুঁজিবাজারে বেঞ্চমার্ক নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠান এমএসসিআই ইনকরপোরেশন। ২০১৭ সালে এমএসসিআই ইনডেক্স অনুযায়ী ৪৭টি দেশের পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে ২২ শতাংশ। মূলত উন্নত দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের করপোরেট কর কমানোর সিদ্ধান্তের কারণে বাজারে এ ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে।

ব্রেক্সিটের প্রভাব থেকে বেরিয়ে এসে দর বাড়ছে পাউন্ডের। ছবি: রয়টার্স
ব্রেক্সিটের প্রভাব থেকে বেরিয়ে এসে দর বাড়ছে পাউন্ডের। ছবি: রয়টার্স


ব্রেক্সিটের প্রভাব থেকে বেরিয়ে এসেছে পাউন্ড

২০১৬ সালে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সবচেয়ে আলোচনার বিষয় ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট)। ওই বছরের জুনে গণভোটে ইইউ থেকে বিচ্ছেদই চাইল বিট্রেনবাসী। আর এর প্রভাবে বিশ্ববাজারে ব্যাপক দরপতন ঘটে যুক্তরাজ্যের মুদ্রা পাউন্ডের। ব্রেক্সিট ভোটের পর থেকে বিশ্ববাজারে পাউন্ডের দর কমতে কমতে ৩১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। ধারণা করা হচ্ছিল, ২০১৭ সালেও এই অবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে। তবে ২০১৭ সালজুড়ে বেশ স্থিতিশীলই ছিল পাউন্ডের বাজার। গত সেপ্টেম্বরে প্রতি পাউন্ডের দর ১ দশমিক ৩৬১ ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। এটি ব্রেক্সিটের পর প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি।

রাজনৈতিক পালা বদল হলেও কাটছে ইউরোজোনের অর্থনৈতিক শঙ্কা। ছবি: রয়টার্স
রাজনৈতিক পালা বদল হলেও কাটছে ইউরোজোনের অর্থনৈতিক শঙ্কা। ছবি: রয়টার্স


কাটছে ইউরোজোনের অর্থনৈতিক শঙ্কা

এই বছরের সবচেয়ে বড় বিস্ময় ছিল ইউরোজোনের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। এক বছর ধরে টালমাটাল অবস্থায় থাকার পর ২০১৭ সালটা বেশ ভালো ছিল ইউরোজোনের অর্থনীতির জন্য। ২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর বাজার বিশ্লেষকেরা ধারণা করছিলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নেও জনপ্রিয় রাজনীতি শেষ হতে চলেছে। আর যার ফলে একক মুদ্রা ইউরো পড়বে হুমকির মুখে। তবে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে এমানুয়েল ম্যাখোঁর মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দলকে বেছে নেয় জনগণ। চরম ডানপন্থী ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেতা মারি লে পেন হেরে যান। আবার জিততে জিততে হেরে গেছেন নেদারল্যান্ডসের পপুলিস্ট নেতা গ্রিট ওয়াইল্ডার্স। তবে রাজনৈতিক পালাবদল হলেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশ স্থিতিশীল ছিল বছরজুড়ে।

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। ছবি: রয়টার্স
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। ছবি: রয়টার্স


আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে

চলতি বছরেই জ্বালানি তেলের দাম গত আড়াই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। বিশ্ববাজারে এই ডিসেম্বরে ব্রেন্ট সুইট লাইট ক্রুড শ্রেণির প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেল ৬৪ দশমিক ৯০ ডলারে বিক্রি হয়েছে, যা ২০১৫ সালের পরে এই শ্রেণির জ্বালানি তেলের সর্বোচ্চ দর। তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেকের নেতা সৌদি আরব এবং ওপেকের সদস্য নয় এমন দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়াও ক্রমাগতভাবে উত্তোলনের পরিমাণ কমিয়ে আনার ঘোষণা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ে। ২০১৮ সালে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা বাড়তে পারে বলে জল্পনা-কল্পনা যেমন রয়েছে, তেমনি এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে পূর্বাভাসও আসছে। নতুন বছরের প্রথম কার্যদিবসেই প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েল ৬৬ ডলারে এবং ডব্লিউটিআই শ্রেণির তেল ৬০ ডলারে কিনতে হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

ঋণের বোঝা আরও বেড়ে চলেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীনের। ছবি: রয়টার্স
ঋণের বোঝা আরও বেড়ে চলেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীনের। ছবি: রয়টার্স


আশঙ্কা চীনের ঋণের বোঝা

ঋণের বোঝা আরও বেড়ে চলেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীনের। চলতি বছরের জানুয়ারিতেই দেশটির ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ঋণ করেছে, তা দক্ষিণ আফ্রিকার বার্ষিক জিডিপির চেয়ে বেশি। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ধার নেওয়ার প্রবণতা এরই মধ্যে চীনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সতর্ক করেছে যে আন্তর্জাতিক নিয়মের চেয়ে চীনের ঋণ বেশি এখন। বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে চীনের বিদেশি ঋণের পরিমাণ সাড়ে ৭ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১ দশমিক ৬৮ ট্রিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় প্রান্তিকে এই বৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। যদিও চীন প্রবৃদ্ধিতে কোনো রকম চাপ না দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। তবে নতুন বছরের জন্য চীনের এই ঋণসংকট একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা।

দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে শাকিলা হক