শীর্ষ খেলাপিদের কাছে আটকা ৪০ শতাংশ ঋণ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

শীর্ষ খেলাপি গ্রাহকদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। খেলাপি ঋণের বড় অংশই আটকে আছে এসব শীর্ষ খেলাপির কাছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশ এল এমন পরিপ্রেক্ষিতে, যখন ব্যাংকগুলো শীর্ষ খেলাপিদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে পারছে না। পাশাপাশি আইনি প্রক্রিয়াতেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না।

প্রতিটি ব্যাংকে শীর্ষ ২০ জন করে খেলাপি গ্রাহকের কাছে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাবে আটকা পড়েছে ৩২ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। এ সময়ে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের প্রায় ৪০ শতাংশই ব্যাংকগুলোর শীর্ষ ২০ জন করে খেলাপি গ্রাহকের কাছে রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বুধবার সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডিকে খেলাপি ঋণ বিষয়ে চিঠি দেয়। এতে শীর্ষ খেলাপি গ্রাহকদের কাছ থেকে ঋণ আদায় পরিস্থিতি ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের সভায় উত্থাপন করে তদারকি জোরদারের কথা বলা হয়।

চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, খেলাপি ঋণের একটি বড় অংশ শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রাহকের মধ্যে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে। এ ঋণের বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ খেলাপি ঋণের তুলনায় অপ্রতুল। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর গৃহীত ব্যবস্থা কার্যকর প্রতীয়মান হয় না। এ জন্য আদায় কার্যক্রম জোরদার করার মাধ্যমে শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রাহকের ঋণের পরিমাণ আরও কমিয়ে আনা আবশ্যক। ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘২০১৮ সালের জন্য ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপি ঋণের বিপরীতে আদায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। তা পরিচালনা পর্ষদের সভায় উত্থাপন করে পর্ষদের অভিমতসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে। এ ছাড়া প্রতি তিন মাস পরপর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায়ের অবস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে। এটা পর্ষদকেও অবহিত করতে হবে।’

এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নিয়মিত ভিত্তিতে শীর্ষ ২০ খেলাপি ঋণের তদারকি করে থাকি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমঝোতা চুক্তির আলোকেও এ বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, গত জুন শেষে শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রাহকের কাছে সোনালী ব্যাংকের আটকা ছিল ৩ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের পাওনা ছিল ১ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের পাওনা ছিল ২ হাজার ২১৮ কোটি টাকা ও রূপালী ব্যাংকের ২ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। এ ছাড়া শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রাহকের কাছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের আটকে আছে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। ব্যাংকের শীর্ষ পাঁচ খেলাপি গ্রাহক হলো সাফারি ট্রেডার্স, ইপসু ট্রেডিং, কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল, ড্রিম ওয়ার্ল্ড পার্ক ও মনোয়ারা ট্রেডিং। এসব খেলাপি গ্রাহকের কাছেই ব্যাংকটির পাওনা ৬৮৬ কোটি টাকা।

খেলাপি ঋণের লাগাম কোনোভাবেই টানতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিশেষ নীতিমালা করে বিশেষ সুবিধা দিয়ে ১৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ দীর্ঘ মেয়াদে পুনর্গঠন করা হয়েছে। পর্যাপ্ত অর্থ জমা ছাড়াই ঋণ পুনঃ তফসিল করে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। খেলাপি ঋণ কমাতে ডিসেম্বরে শেষের দিকে বন্ধের দিনে বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যাংক খোলা রেখে ঋণ পুনঃ তফসিল সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এরপরও কমছে না খেলাপি ঋণ।

গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। এর বাইরে আরও ৪৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। এ তথ্য খেলাপির হিসাবে নিলে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে। ব্যাংকসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যে উদ্দেশ্যে ঋণ নেওয়া হচ্ছে, তার যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। ঋণের অর্থ পাচারও হচ্ছে।
এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও। নিয়মিত ঋণ পরিশোধ না করা ব্যবসায়ীরাই ঠিক করছেন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন পদে কারা আসবেন। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক রয়েছে নীরব দর্শকের ভূমিকায়।