'টেস্ট ক্রিকেট' খেলছেন প্রকল্প কর্তারা!

প্রতিবছরই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার বড় হচ্ছে। হাতে নেওয়া হচ্ছে একের পর এক মেগা প্রকল্প। কিন্তু বাস্তবায়নের দক্ষতা বাড়েনি, শুধুই টাকা খরচ বেড়েছে। গতানুগতিকভাবেই চলছে এডিপি বাস্তবায়ন। বছর শুরু থেকে প্রায় শেষ পর্যন্ত কচ্ছপ গতিতেই চলে প্রকল্প বাস্তবায়ন। আবার শেষ মুহূর্তে এসে বাস্তবায়নে সুপারসনিক গতি পায়। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মাত্র ২৭ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। বছরের অর্ধেক পেরিয়ে গেলেও বরাদ্দের ১০ শতাংশ টাকাও খরচ করতে পারেনি ১১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। প্রতিবারের মতো এবারও যেন ‘টেস্ট ক্রিকেট’ খেলছেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তারা। বছরের শেষ দিকে ‘টি টোয়েন্টি’ ম্যাচ খেলবেন তাঁরা।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছর ধরেই প্রথম ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন ২৫ থেকে ২৮ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে। এর মানে, টাকার অঙ্কে বাস্তবায়ন বাড়লেও আনুপাতিক হারে এডিপি বাস্তবায়নে গতি আনা যাচ্ছে না। ফলে বছরের শেষ দিকে এসে টাকা খরচের ধুম পড়ে।

 জানতে চাইলে সাবেক সরকারি ব্যয় পর্যালোচনা কমিশনের সদস্য ও অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক বছরে এডিপির আকার কয়েক গুণ বেড়েছে। কিন্তু একই প্রশাসন দিয়ে এত বিরাট এডিপি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, এটা ইতিবাচকভাবে দেখা উচিত। তিনি আরও বলেন, এডিপি বাস্তবায়নের মূল্য সমস্যা হলো বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পে দাতাদের অর্থ ছাড়ে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা এবং জমি অধিগ্রহণের জটিলতা। এসব সমাধানে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করা দরকার, যে কমিটি সঙ্গে সঙ্গে সমস্যার সমাধান দিতে পারবে।

আইএমইডির হালনাগাদ তথ্য বলছে, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে খরচ হয়েছে ৪৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা বা এডিপির ২৭ শতাংশ। অবশ্য গতবারও ২৭ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল। তখন টাকা খরচ হয়েছিল ৩৩ হাজার ৫৫৪ কোটি।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে (২০১৭-১৮) স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন ব্যয়সহ এডিপির আকার ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা।

এবার কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রকল্প বাস্তবায়নের দুরবস্থার চিত্র দেওয়া যেতে পারে। এবারের এডিপিতে সরকারি কর্মকমিশনের একটিই প্রকল্প আছে। সেই প্রকল্পে এডিপিতে বরাদ্দ আছে ২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সেখানে গত ছয় মাসে খরচ হয়েছে মাত্র ৪ লাখ ৮১ হাজার টাকা। বাস্তবায়নের হার দশমিক ১৭ শতাংশ। আবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৪১টি প্রকল্পে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। ছয় মাসে খরচ মাত্র ৮৫ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ৬ শতাংশের বেশি।

সব মিলিয়ে বরাদ্দের ১০ শতাংশ খরচ করতে পারেনি এমন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংখ্যা ১১। সরকারি কর্মকমিশন ও শিল্প মন্ত্রণালয় ছাড়া এই তালিকায় থাকা অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হলো বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি), আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইএমইডি, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়।

এবার বেশি বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর দিকে নজর দেওয়া যাক। এডিপিতে বেশি বরাদ্দ পাওয়া শীর্ষ ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগই বরাদ্দের ৫০ শতাংশের বেশি খরচ করতে পেরেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের ৯৭টি প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকার মধ্যে খরচ হয়েছে ১২ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা। বরাদ্দের ২০ শতাংশের কম খরচ করেছে এমন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ আছে চারটি। এগুলো হলো রেলপথ মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।