ফোর-জি আসছে মার্চে

দেশে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোর–জি) টেলিযোগাযোগ সেবা চালুর লাইসেন্স নিতে পাঁচটি মোবাইল ফোন অপারেটর আবেদন করেছে। এরা হলো গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, টেলিটক ও সিটিসেল। এর মধ্যে সিটিসেলের কার্যক্রম এখন বন্ধ আছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) আশা করছে, প্রক্রিয়াগত বিভিন্ন কাজ শেষ করে আগামী মার্চের মধ্যেই দেশে ফোর–জি সেবা চালু করা সম্ভব হবে।

ফোর–জি সেবার লাইসেন্স নিয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ গতকাল রোববার রাজধানীর রমনায় কমিশন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। ফোর–জি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার শেষ দিন ছিল গতকাল রোববার। ফোর–জি লাইসেন্সের পাশাপাশি তরঙ্গ নিলামে অংশ নেওয়ার জন্য গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও সিটিসেল আবেদন করেছে বলেও জানান বিটিআরসির চেয়ারম্যান।

শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ফোর–জি লাইসেন্স ও তরঙ্গ নিলামের আবেদন যাচাইয়ে দুটি মূল্যায়ন কমিটি করা হয়েছে। তারা ২৩ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন কমিশনের কাছে জমা দেবে।

ফোর–জি লাইসেন্স আবেদন যাচাইয়ের পর কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রতিবেদনটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠানো হবে। সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি তরঙ্গ নিলামের পরদিনই অর্থ জমা দেওয়ার সাপেক্ষে ফোর–জি লাইসেন্স হস্তান্তর করা হবে বলে জানান বিটিআরসির চেয়ারম্যান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ফোর–জি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে নির্দিষ্ট অর্থ জমা দিয়ে লাইসেন্স নেওয়া যাবে। এ জন্য মোবাইল ফোন অপারেটরদের এক মাস সময় দেওয়া হবে। লাইসেন্সের আবেদন ফি হিসেবে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। লাইসেন্স পেতে দিতে হবে ১০ কোটি টাকা। বার্ষিক নবায়ন ফি হবে ৫ কোটি টাকা। এ লাইসেন্স নিতে অপারেটরদের ১৫০ কোটি টাকা ব্যাংক গ্যারান্টিও দিতে হবে। ফোর–জি সেবা দিয়ে যে আয় অপারেটররা করবে তার সাড়ে ৫ শতাংশ সরকারকে দিতে হবে।

তরঙ্গ নিলামের বিষয়ে জানানো হয়, নতুন তরঙ্গ বরাদ্দ পেতে অপারেটরদের নিলামে অংশ নিতে হবে। নীতিমালায় ৯০০ ও ১ হাজার ৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের তরঙ্গ নিলামের ভিত্তিমূল্য ঠিক করা হয়েছে প্রতি মেগাহার্টজে ৩ কোটি মার্কিন ডলার। আর ২ হাজার ১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের ভিত্তিমূল্য ধরা হয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আবার টুজি ও থ্রি–জি সেবার জন্য বরাদ্দ করা তরঙ্গে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা পেতে প্রতি মেগাহার্টজের জন্য আলাদা দাম দিতে হবে অপারেটরদের। সব তরঙ্গপ্রযুক্তি নিরপেক্ষ করলে দাম পড়বে ৪০ লাখ ডলার, আর আংশিক প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার জন্য দাম দিতে হবে ৭৫ লাখ ডলার।

এসব প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী মার্চ নাগাদ সাধারণ মানুষের জন্য দেশে ফোর–জি সেবা চালু করা সম্ভব হবে বলে জানান বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ। তিনি বলেন, অপারেটররা ফোর–জি সেবা দিতে প্রস্তুতি নিয়েছে। খুব দ্রুত তারা এ সেবা দিতে পারবে।

সরকারের বকেয়া থাকার পরও সিটিসেল ফোর–জির লাইসেন্স কীভাবে পেতে পারে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে বিটিআরসি লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম শহীদুজ্জামান বলেন, সিটিসেল বকেয়ার অধিকাংশ টাকা জমা দিয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা যদি পুরো টাকা দেয় তাহলে ফোর–জি সেবা দিতে আইনগত বাধা থাকবে না।

বিটিআরসির সচিব ও মুখপাত্র সরওয়ার আলমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে কমিশনার, মহাপরিচালক, পরিচালকসহ কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে ফোর–জির জন্য বিটিআরসির দেওয়া বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে চেম্বার বিচারপতির দেওয়া স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বিটিআরসির করা আবেদন গতকাল রোববার নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেন।

আদেশের পর বিটিআরসির আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই রাকিব বলেন, এ আদেশের ফলে ফোর–জি লাইসেন্সের পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনায় আইনগত কোনো বাধা নেই।

বর্তমানে বাংলাদেশে যেকোনো শ্রেণির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ন্যূনতম গতি ৫ এমবিপিএস। দেশে থ্রি–জি প্রযুক্তির গড় গতি কত, সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য বিটিআরসির কাছে নেই। তবে ফোর–জি সেবার ন্যূনতম গতি ২০ এমবিপিএস নির্ধারণ করেছে বিটিআরসি।