পোশাকশ্রমিকের মজুরি বাড়ছে

তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করেছে শ্রম মন্ত্রণালয়। ফলে চলতি বছরই দেশের সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়ের এই খাতটির শ্রমিক ও কর্মচারীরা নতুন কাঠামোতে মজুরি পাবেন।

বর্তমানে পোশাকশ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৩ হাজার টাকা, বাড়িভাড়া ১ হাজার ২০০ টাকা এবং চিকিৎসা, যাতায়াত ও খাদ্য ভাতা ১ হাজার ১০০ টাকা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এই মজুরিকাঠামোটি কার্যকর হয়। তার আগে পোশাকশ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ছিল ৩ হাজার টাকা। একেকটি মজুরিকাঠামো পাঁচ বছরের জন্য ঘোষণা করা হয়। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর হিসাবে, এ খাতে বর্তমানে ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। যার সিংহভাগই নারী।

রাজধানীর সচিবালয়ে গতকাল রোববার দুপুরে পোশাকশিল্পের জন্য নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের বিষয়টি সংবাদ সম্মেলন করে জানান শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক। পরে মন্ত্রণালয় থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।

প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক পোশাক খাতের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের জন্য মালিকদের পক্ষ থেকে বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান এবং শ্রমিকদের প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় শ্রমিক লীগের নারীবিষয়ক সম্পাদিকা শামসুন্নাহার ভূঁইয়ার নাম ঘোষণা করেন। শামসুন্নাহার ২০১০ সালেও পোশাকশিল্পের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের শ্রমিক প্রতিনিধি ছিলেন।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চার সদস্যবিশিষ্ট স্থায়ী নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান হচ্ছেন সিনিয়র জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম। অপর সদস্যরা হলেন মালিকপক্ষের প্রতিনিধি বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের শ্রম উপদেষ্টা কাজী সাইফুদ্দীন আহমদ, শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি বাংলাদেশ শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক এবং নিরপেক্ষ প্রতিনিধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন।

সংবাদ সম্মেলনে মুজিবুল হক বলেন, নিম্নতম মজুরি বোর্ডকে ছয় মাসের মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে নিম্নতম মজুরি ঘোষণা করবে। পরে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়ে গেছে। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। দু–এক দিনের মধ্যে সেটি গেজেট আকারে প্রকাশ হয়ে যাবে।

সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত গতকালের সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত শ্রমসচিব আফরোজা খান, বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান ও সহসভাপতি মো. নাছির উদ্দিন, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, পোশাকশ্রমিকদের জন্য নিম্ন মজুরি বোর্ড গঠন করার অনুরোধ জানিয়ে গত নভেম্বরে শ্রম মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় বিজিএমইএ। তারপর শ্রম অধিদপ্তরকে মজুরি বোর্ডের জন্য মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নাম প্রস্তাব করতে নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী মালিক প্রতিনিধি হিসেবে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান ও পরিচালক আদনান কোরেশি এবং শ্রমিক প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদের নাম দেয় অধিদপ্তর।

শ্রমিক প্রতিনিধি হিসেবে শুক্কুর মাহমুদের নাম জানাজানি হওয়ার পর প্রতিবাদ করে ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলসহ কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন। ২২টি শ্রমিক সংগঠনের জোট ইন্ডাস্ট্রিঅল গত মাসে শ্রম প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে বলে, আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে যোগ্য শ্রমিক প্রতিনিধিকে মজুরি বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা না হলে বোর্ড গ্রহণযোগ্য হবে না। একতরফা বোর্ড হলে পোশাকশ্রমিকেরা কোনোভাবেই তা মেনে নেবেন না।

জানতে চাইলে ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা একজনের নাম প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু সেটি বিবেচনা করা হয়নি। মজুরি বোর্ডে শ্রমিকদের দুজন প্রতিনিধিই জাতীয় শ্রমিক লীগ থেকে করা হলো। বিষয়টি কোনোভাবেই সন্তোষজনক নয়।’

 জানতে চাইলে নতুন মজুরি বোর্ডের শ্রমিক প্রতিনিধি শামসুন্নাহার ভূঁইয়া গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে আমি বিষয়টি এখনো জানি না। তবে সবার সহযোগিতা পেলে শ্রমিকদের জন্য ন্যায্য মজুরিসহ অন্যান্য সুবিধা আদায়ে সাধ্যমতো চেষ্টা করব।’ তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ফেডারেশনের নেতা ও অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা করেই মজুরি বোর্ডে প্রস্তাব দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান বাজারে একজন শ্রমিকের ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য কত মজুরি হওয়া দরকার, সেটি নজরে রাখা হবে।

শ্রম মন্ত্রণালয় জানায়, ২৪টি খাতের মজুরি নির্ধারণের জন্য পাঁচ বছর সময় শেষ। এর মধ্যে জাহাজভাঙা, কটন টেক্সটাইল, দরজি কারখানা, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ, বেকারি-বিস্কুট অ্যান্ড কনফেকশনারি এবং ট্যানারি শিল্পের মজুরি পুনর্নির্ধারণের কাজ চলছে। গত মাসে ট্যানারি শ্রমিকদের জন্য সর্বনিম্ন ১২ হাজার ৮০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ৪০০ টাকা সুপারিশ করে বোর্ড। আর গত নভেম্বরে জাহাজভাঙা শিল্পের শ্রমিকদের জন্য সর্বনিম্ন ১৬ হাজার ও সর্বোচ্চ ৩৪ হাজার টাকা মজুরির সুপারিশ করা হয়েছে।

এদিকে কয়েক মাস ধরে শ্রমিক সংগঠনগুলো পোশাকশ্রমিকদের জন্য সর্বনিম্ন ১৬ হাজার টাকা মজুরি দাবি করছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির নেতা–কর্মীরা পোশাকশ্রমিকদের নিম্নতম মূল মজুরি ১০ হাজার টাকাসহ মোট মজুরি ১৬ হাজার টাকার দাবিতে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় মিছিল-সমাবেশ করেন।