বাড়তি লাগবে ৭৫ লাখ কোটি টাকা

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে সরকারকে যেসব নতুন কর্মসূচি নিতে হবে, এ জন্য আগামী ১৩ বছরে বাংলাদেশের অতিরিক্ত ৯৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলার লাগবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৭৫ লাখ কোটি টাকার সমান। এসডিজির অর্থায়ন নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) এক প্রাক্কলনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

আজ বুধবার থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) বৈঠকে অর্থায়নের এ হিসাব তুলে ধরা হবে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, এসডিজি বাস্তবায়নে অতিরিক্ত এই অর্থ চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের প্রায় ১৯ গুণ।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এসডিজির সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কী কী কর্মসূচি নেওয়া হবে, তা চলতি জানুয়ারি মাসেই চূড়ান্ত করা হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা থাকবে। ইতিমধ্যে নতুন কর্মসূচি কী নেওয়া হবে, এর প্রস্তাব পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। একটি মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ ৭৪টি নতুন কর্মসূচির প্রস্তাব পাঠিয়েছে। বেশির ভাগ মন্ত্রণালয় ৩০-৩৫টি করে নতুন কর্মসূচির প্রস্তাব দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, এসডিজির অনেক কিছুই সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিস্তারিত আসেনি। এখন এসডিজির জন্য নতুন নতুন কর্মসূচি নিতে হবে। এ জন্য অতিরিক্ত অর্থ লাগবে। অতিরিক্ত অর্থের ৪২ শতাংশ সরকারি উৎস থেকে দেওয়া সম্ভব। বাকিটা বেসরকারি খাত, বিদেশি সহায়তা ও বিদেশি বিনিয়োগ থেকে আসতে পারে। তিনি জানান, উন্নত দেশগুলো তাদের মোট দেশজ আয়ের (জিএনআই) দশমিক ৭ শতাংশ স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দেবে। ওই সব দেশ প্রযুক্তি হস্তান্তর করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এখন ওই সব দেশের কাছে এসব সম্পদ চাইতে হবে।

পাঁচটি খাত থেকে এসডিজির এই অর্থ জোগাড় করা হবে বলে জিইডির প্রাক্কলনে বলা হয়েছে। এগুলো হলো সরকারি ও বেসরকারি খাতের অর্থায়ন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি), প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), বৈদেশিক সহায়তা এবং এনজিও খাতের অর্থায়ন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪২ শতাংশ অর্থায়ন আসবে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ থেকে। এ ছাড়া সরকারি খাত থেকে ৩৫ শতাংশ, পিপিপি থেকে ৬ শতাংশ, এফডিআই ও বৈদেশিক সাহায্য থেকে ১৫ শতাংশ এবং বাকিটা এনজিও খাত থেকে আসবে।

এসডিজি অর্থায়নের এই প্রাক্কলন তৈরিতে দুটি বিষয়কে মূলত বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে এ বিবেচনার জন্য ২০১৬-১৭ থেকে ২০২৯-৩০ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) গড় প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ধরা হয়েছে। দ্বিতীয়ত বিবেচনায় ধরা হয়েছে, এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশে উন্নীত হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই ধারা এসডিজির ৮ নম্বর লক্ষ্যের চেয়ে অনেক বেশি। এসডিজির ৮ নম্বর লক্ষ্যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য টেকসইভাবে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে।

জিইডির হিসাবে, ২০১৭ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জিডিপির আকার দাঁড়াবে ৪ লাখ ৯৮ হাজার বিলিয়ন টাকা (প্রতি বিলিয়নে ১০০ কোটি)।

এসডিজির ১৭টি লক্ষ্য অর্জনে কয়েকটি বড় সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়েছে জিইডির প্রতিবেদনে। এর মধ্যে প্রথমেই আছে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও কার্যক্রম বাস্তবায়নে সক্ষমতা বাড়ানো। প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি প্রকল্প শেষ হতে যত দেরি হবে, এর সম্ভাব্য সুফল পাওয়ার হার তত কমে যায়। আগামী ১৩ বছর ধরে কর আদায় ৯ শতাংশীয় পয়েন্ট হারে বাড়ানো কঠিন হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এ জন্য অবশ্যই প্রযুক্তির ব্যবহার ও সক্ষমতা বাড়ানোর মতো সংস্কারকাজ বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে দক্ষতার সঙ্গে দর-কষাকষির ওপর এ খাতে অর্থ পাওয়া নির্ভর করবে। তাই গুরুত্ব অনুসারে বাংলাদেশকে বিভিন্ন খাতের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিতে হবে।