কাজির গরু গোয়ালে নেই

বাংলাদেশের নীতিমালা ও আইনকানুন বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বেশ সহায়ক হলেও তার বাস্তবায়ন ততটা নেই। এ বিষয়টি উল্লেখ করে ব্যবসায়ীদের প্রভাবশালী সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবির বলেছেন, কাজির গরু কেতাবে থাকলেও গোয়ালে নেই।

নিহাদ কবির দেশের উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ে সরকার আয়োজিত দুই দিনের সম্মেলন বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) সভায় বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে এক অধিবেশনে এ কথা বলেন। তাঁর বক্তব্যের আগে দেশে বিনিয়োগের সুবিধা, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ নিয়ে সরকারি ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কর্মকর্তারা কথা বলেন।

দুই দিনের বিডিএফ সম্মেলন গতকাল বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে অনুষ্ঠিত একাধিক অধিবেশনের মধ্যে একটি ছিল ‘বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি এবং বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্তকরণ’ শিরোনামে। প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম।

অধিবেশনে আলোচক ছিলেন পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) পরিচালক ও সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ তারেক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক কেইচিরো নাকাজাওয়া এবং বিশ্বব্যাংক গোষ্ঠীর ঢাকা কার্যালয়ের বাণিজ্য ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বিভাগের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ মাশরুর রিয়াজ।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুবিধাগুলো উল্লেখ করে কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, এ দেশ ভৌগোলিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে অবস্থিত। বাংলাদেশের বড় শ্রমশক্তি আছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভালো ও স্থিতিশীল। অবকাঠামোও উন্নত হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব একটা সুবিধাও। ঘনত্বের কারণেই অবকাঠামোর ব্যবহার বেশি হয়। তাই এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে।

মোহাম্মদ তারেক বলেন, এ দেশে রাষ্ট্রীয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অবনতি হতে থাকলে, আমলাতন্ত্রের দক্ষতা না বাড়লে এবং আমলাতন্ত্র বিনিয়োগ সহযোগী না হলে বিদেশি বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত হারে আসবে না।

মাশরুর রিয়াজ বলেন, ভবিষ্যতে দেশে ভালো কর্মসংস্থান তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক বাজার ধরার বিকল্প নেই। সে জন্য প্রয়োজন বিদেশি বিনিয়োগ।

নিহাদ কবির বিদেশি বিনিয়োগ টানতে দেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ নিশ্চিত করার তাগিদ দেন। তিনি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করেন। বলেন, প্রতিবছর জানুয়ারি এলেই পরবর্তী বাজেটে কর কাঠামো নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হয়। কিন্তু মধ্য মেয়াদে করের হার নিয়ে তেমন কোনো পরিবর্তন হওয়া উচিত না। তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সব সময় কর ও বিদেশি মুদ্রাবিষয়ক আইন নিয়ে প্রশ্ন করে। কোম্পানি আইন এখনো সংশোধন করা যায়নি।

নিহাদ কবির নিয়ন্ত্রণগত এবং আইনি সমস্যা দূর করার তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘নইলে ওয়ান স্টপ সার্ভিস ফুল স্টপ সার্ভিসে পরিণত হবে।’

সবশেষে গওহর রিজভী বলেন, ‘অর্থনীতির মৌলিক অবস্থা ভালো থাকা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকার পরও বাংলাদেশ কেন প্রতিবেশীদের চেয়ে কম বিদেশি বিনিয়োগ পাচ্ছে, সেই প্রশ্ন আমাদের নিজেদের করতে হবে।’