কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলায় যাচ্ছে সোনালী

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সোনালী ব্যাংক। হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকে অন্য ব্যাংকের পাওনা হিসেবে পরিশোধ করা টাকা ফিরিয়ে আনতে এ মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। মামলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি, গ্রাহক ও অন্য ব্যাংকগুলোকে আসামি করা হবে বলে সোনালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনাটি ঘটেছে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখায়।

সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংককে ১০ কোটি ৮৮ লাখ ডলার (৮৯২ কোটি টাকা) পরিশোধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। হল–মার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের স্বীকৃত বিলের বিপরীতে নন–ফান্ডেড দায় তৈরি হওয়ায় অন্য ব্যাংকগুলোকে এসব অর্থ পরিশোধ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকেই এ টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু সোনালী ব্যাংক বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত বেআইনি।

সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আশরাফুল মকবুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকের হিসাব থেকে কেটে নেওয়া টাকা ফিরিয়ে আনতে মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

গতকাল সোনালী ব্যাংকের সাবেক রূপসী বাংলা শাখায় (বর্তমানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল) গিয়ে দেখা যায়, শাখাজুড়েই ফাইলের স্তূপ। মামলার নথিপত্র গোছাতে ভাড়া করা চারটি মেশিনে চলছে ফটোকপির কাজ। শাখাটির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৮৯২ কোটি টাকা ফিরিয়ে আনতে ৪০০-৪৫০ মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য ১ হাজার ৩৬১টি বিলের নথি তৈরি করা হচ্ছে। হল-মার্ক কেলেঙ্কারির জন্য বিশেষভাবে আলোচিত এ শাখা। শাখার আয়তন ২ হাজার বর্গফুট।

গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ সভায় সিদ্ধান্ত হয়, অর্থ ফেরাতে মামলা করা হবে। তাতে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থের সুবিধাভোগী ব্যাংক ও গ্রাহক, সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও হল-মার্ক গ্রুপের মালিকদের আসামি করা হবে।

এই অবস্থায় গত মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল শাখাটি পরিদর্শনে গিয়ে নানা অব্যবস্থাপনা দেখতে পায়। শাখা ব্যবস্থাপকের কক্ষে গিয়েও দেখে, সোফাজুড়ে ফাইল। বসার সুব্যবস্থা নেই। এ পর্যায়ে দলটির সদস্যরা অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে শাখা থেকে বের হয়ে আসেন। পরে সোনালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়া হয়। এ ঘটনায় শাখা ব্যবস্থাপক মল্লিক আবদুল্লাহ আল মামুনকে সাময়িক বরখাস্ত করে সোনালী ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে তাঁকে বরখাস্ত করা হয় বলে জানা গেছে।

সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দলকে সহায়তা করা আমাদের দায়িত্ব। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে। তাৎক্ষণিক ওই শাখার ব্যবস্থাপককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তি দেওয়া হবে, না হলে সাময়িক বরখাস্ত প্রত্যাহার করা হবে।’