শিগগিরই বাড়বে না ঋণের সুদহার

ওয়েনচাই ঝ্যাং
ওয়েনচাই ঝ্যাং

নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলেও বাংলাদেশের জন্য ঋণ সহায়তার সুদের হার শিগগিরই বাড়ছে না বলে জানিয়েছেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েনচাই ঝ্যাং। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ এখন কম সুদে ঋণ পায়। পাশাপাশি বাজারের হারেও ঋণ দেওয়া হয়। অদূর ভবিষ্যতে এখানে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।

মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া ও উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেলে বাংলাদেশকে বাড়তি সুদে ঋণ নিতে হবে, এমন আশঙ্কার মধ্যেই গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি বুধ ও বৃহস্পতিবার সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকা এসেছেন। তাঁর সফর সম্পর্কে জানাতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এডিবির কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

ওয়েনচাই ঝ্যাং বলেন, ১৯৭৩ থেকে বাংলাদেশ ও এডিবি খুব ভালো সম্পর্কের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ সময়ে এডিবি ২ হাজার কোটি ডলারের ঋণ বাংলাদেশকে দিয়েছে। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ১৯০ কোটি ডলার, এডিবির মোট ঋণের ১০ শতাংশ। বাংলাদেশ এডিবির ষষ্ঠ বড় গ্রাহক। এ দেশের আগে আছে চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও ভিয়েতনাম।

ওয়েনচাই ঝ্যাং জানান, এডিবি বিভিন্ন দেশকে তার অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে এ, বি ও সি শ্রেণিতে ভাগ করে ঋণ দেয়। বর্তমানে বাংলাদেশ বি শ্রেণিতে আছে। এ শ্রেণিতে কম সুদের পাশাপাশি বাজারের হারেও ঋণ দেওয়া হয়। সি শ্রেণিতে শুধু বাজারের সুদের হারে ঋণ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘সামনের বছরগুলোতে বাংলাদেশ এখনকার শর্তেই ঋণ পাবে, অদূর ভবিষ্যতে আমি এ ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না। বাংলাদেশের শ্রেণি পরিবর্তন করার পরিকল্পনা আপাতত নেই।’

ওয়েনচাই ঝ্যাং আরও বলেন, বাংলাদেশ যদি উচ্চ মধ্যম আয়ের অথবা উচ্চ আয়ের দেশ হয়, তাহলে একদিন সি শ্রেণিতে উন্নীত হবে। তবে বাংলাদেশ কবে সেটা হবে, সেটা এখনই নিশ্চিত নয়।

সংবাদ সম্মেলনে এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। দেশে কর্মসংস্থানহীন মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্মসংস্থান বাড়াতে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে নেওয়া দরকার। এ জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে (এসএমই) সহায়তা দেওয়া দরকার। ব্যবসার জন্য উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তিনি আইনগত, শাসনগত ও অন্যান্য দিক দিয়ে উন্নতির ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন।

বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা নিয়েও কথা বলেন ওয়েনচাই ঝ্যাং। তিনি বলেন, বিশাল কর্মশক্তি ও ভৌগোলিক দিক দিয়ে সুবিধাজনক অবস্থান বাংলাদেশকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এগিয়ে রাখতে পারে। এ জন্য আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে এবং বৈশ্বিক উৎপাদন ব্যবস্থার অংশ হতে হবে।

বাংলাদেশ কীভাবে তার উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে, এ বিষয়েও পরামর্শ দেন ওয়েনচাই ঝ্যাং। তিনি বলেন, প্রতি পাঁচ বছর পরপর বাংলাদেশ যে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নেয়, সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে সুষ্ঠুভাবে। তাহলেই একদিন উন্নত দেশ হওয়া যাবে। অবশ্য এডিবির এই কর্মকর্তা মনে করেন, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ নয়। এ জন্য প্রচুর বিনিয়োগ দরকার।

এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত, কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া, ধনী-গরিব বৈষম্য নিরসনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জোর দেন। এসব ক্ষেত্রে সহায়তা বাড়ানোর আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, এ দেশে অবকাঠামো ঘাটতি এখনো বড় সমস্যা। বিভিন্ন জ্বালানি ও ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন দরকার। পাশাপাশি ঢাকা শহরেও অবকাঠামো প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে এডিবির এদেশীয় পরিচালক মনমোহন প্রকাশ উপস্থিত ছিলেন।