সাত বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে

রাজধানীর সোনারগাঁ হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) সম্মেলন শেষে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত l ছবি: প্রথম আলো
রাজধানীর সোনারগাঁ হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) সম্মেলন শেষে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত l ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশের উন্নয়নে দাতা সংস্থা ও দেশগুলো সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে পরিকল্পনা ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অগ্রগতিসমূহ গ্রহণ করেছে দাতারা। সরকার ও দাতা—উভয় পক্ষ মনে করে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে সাতটি বিষয় সামনে এসেছে। সেগুলো হলো শোভন কাজ সৃষ্টি করা এবং প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের বাধা দূর করা; সুশাসন, আইনের শাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ব্যবস্থা শক্তিশালী করা; হতদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা শক্তিশালী করা; দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি; নারীর ক্ষমতায়ন; জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার পর দাতাদের সহযোগিতার পরিকল্পনা তৈরি।

গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) সভা শেষে যৌথ ঘোষণায় এসব কথা বলা হয়েছে। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গতকাল শেষ দিনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও স্থানীয় পরামর্শক গোষ্ঠীর (এলসিজি) কো-চেয়ার ও ইউএস এইডের মিশন ডিরেক্টর ইয়ানিনা জেরুজালেস্কি।

যৌথ ঘোষণায় আরও বলা হয়েছে, সুশাসনব্যবস্থা জোরদার করতে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। এ ছাড়া বিচার খাতের (জাস্টিজ সেক্টর) সংস্কার, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল ও তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়ন, প্রশাসনিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, দাতারা যতই কঠিন দর-কষাকষি করুক না কেন, শেষ পর্যন্ত আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হয়। এবারের বৈঠকে তেমন কিছুই করতে হয়নি। এটা ভালো সংবাদ। আগামী নতুন সরকার যখন আসবে, তখন একটি নতুন ফোরাম থাকবে। যে সরকারই থাকুক না কেন, তাদের জন্য শুভেচ্ছা রইল।

অর্থমন্ত্রী বলেন, যখন এসডিজি নেওয়া হয়, তখন বলা হয় এটি ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যাপার। এবারের বিডিএফের আলোচনায় এই অর্থায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এটা বাস্তবে রূপ দিতে অসাধারণ উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থায়নের ক্ষেত্রে দাতাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অর্থায়ন আসলেই একটি কঠিন বিষয়। তাই বাংলাদেশের জন্য এসডিজির কোন কোন লক্ষ্য প্রযোজ্য, সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে দাতাদের কাছ থেকে অনেক পয়সা পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা পাইনি। তবু এমডিজিতে ভালো করেছি। এখনো সেই পন্থা অবলম্বন করতে হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এলডিসি থেকে বের হয়ে গেলেও ব্যয়বহুল ঋণ নিতে আপত্তি নেই। তখন বিভিন্ন ধরনের ঋণের দ্বারও খুলে যাবে। এখনো এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক ও জাপানের কাছ থেকে বেশি ব্যয়বহুল ঋণ নিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘এলডিসি থেকে বের হলেও আমরা ঋণ নেব। তবে ২০৪১ সালে যে লক্ষ্য আমাদের রয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলেও ঋণ আর নাও লাগতে পারে।’ রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণে সহায়তার জন্য আমি নিজে বিশ্বব্যাংকের কাছে দরখাস্ত করেছি। তবে এখন আমরা এই প্রক্রিয়াটি কিছু শ্লথ করেছি। এখন নিজেরা যতটা পারছি, তা দিয়ে ভাসানচরে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

ইয়ানিনা জেরুজালেস্কি বলেন, ‘গত দুই দিনে ব্যবসায় পরিবেশ, বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিতে এখন গতি আছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনই আরও বেশি সমৃদ্ধির পথে এগোচ্ছে। আমরা আশা করি, এই সমৃদ্ধির পথে বেসরকারি খাত ও সুশীল সমাজের অংশগ্রহণ বাড়বে।’ তাঁর মতে, অর্থনীতিতে নারীদের সক্রিয় করতে হবে। এতে অর্থনীতিতে সম্পদের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এসডিজি বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থায়নের ওপর জোর দেন তিনি।

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এই ফোরামে উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আমরা সব সময় সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সমর্থন করি।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ইআরডি সচিব কাজী সফিকুল আযম ও অতিরিক্ত সচিব মনোয়ার আহমেদ।