গরমের চেয়ে শীতেই বেশি অসন্তুষ্টি!

গরম নয়, শীতেই বিদ্যুৎ নিয়ে সাধারণ মানুষ বেশি অসন্তুষ্ট। গরমে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ অসন্তুষ্ট। আর শীতে সেটি বেড়ে সাড়ে ১৩ শতাংশে দাঁড়ায়। শীত-গরম মিলিয়ে অসন্তুষ্টির হার ১৩ দশমিক ১ শতাংশ।

বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জনমত জরিপে গ্রাহকের সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে গ্রাহকেরা দৈনিক গড়ে কত ঘণ্টা বিদ্যুৎ পান কিংবা লোডশেডিং কত ঘণ্টা, বিদ্যুতের দাম নিয়ে গ্রাহকের কোনো অসন্তোষ আছে কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য উঠে আসেনি জরিপে।

বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের (ইপিআরসি) সহযোগিতায় বিবিএসের এই জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে দেশের ১১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যাপারে খুবই সন্তুষ্ট। ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ সন্তুষ্ট, ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ মোটামুটি সন্তুষ্ট এবং ১৩ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ সন্তুষ্ট নয়। তবে গ্রীষ্ম ও শীতকালে সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির হারের মধ্যে পার্থক্য হয়।

রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনের মুক্তি হলে গতকাল সোমবার জরিপের ফলাফল প্রকাশ করতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ-সচিব আহমদ কায়কাউস, ইপিআরসির চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ চৌধুরী, পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ প্রমুখ। জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন বিবিএসের কর্মকর্তা সি এস রায়।

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ১৪ হাজার ৯৯৬ জন গ্রাহকের সাক্ষাৎকার নিয়ে জরিপটি করেছে বিবিএস। তাঁদের মধ্যে গ্রীষ্মে ৯ হাজার ৯২৭ এবং শীতে ৯ হাজার ৬৭৩ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। গ্রাহকদের মধ্যে ৭৩ দশমিক ৬ শতাংশ পল্লি, ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ পৌর এবং সাড়ে ৮ শতাংশ শহর এলাকায় বসবাস করেন। ২০১৬ সালের অক্টোবর ও ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রাহকদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

জরিপে উঠে এসেছে, বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ খুবই সন্তুষ্ট। সবচেয়ে কম চট্টগ্রামে, সাড়ে ৫ শতাংশ। তবে সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগের ১৭ শতাংশ মানুষ অসন্তুষ্টি জানিয়েছেন। অসন্তুষ্টি সবচেয়ে কম রাজশাহীতে, এ হার ৯ দশমিক ৯ শতাংশ।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দেশের ৪৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পেত। বর্তমানে ৯০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় চলে এসেছে। তবে মানসম্মত ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে।

রান্নার কাজে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে এমন তথ্যও উঠে এসেছে জরিপে। বর্তমানে ১২ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ রান্নায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। পল্লি অঞ্চলে এই হার ৭ শতাংশ হলেও পৌর এলাকায় ২০ শতাংশ। তবে সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ রান্নায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের গ্রাহকসংখ্যা ২ কোটি ৭৭ লাখ। দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৬ হাজার ৪৬ মেগাওয়াট। গত বছর পর্যন্ত দৈনিক গড়ে উৎপাদন হয়েছে ৯ হাজার মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন বিদ্যুৎ-সচিব আহমদ কায়কাউস। তিনি বলেন, চলতি ও আগামী বছর জাতীয় গ্রিডে ৪ হাজার ৪২৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে। ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে আরও ৯ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে আসবে। তিনি বলেন, ২০২১ সালে বিদ্যুতের চাহিদা হবে ১৯ হাজার মেগাওয়াট। এ জন্য ১ কোটি ৫০০ ডলারের বিনিয়োগ দরকার। সেটি পাওয়া ইতিমধ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে গ্রাহকের আস্থা ও অনাস্থার বিষয়টি জরিপে উঠে এসেছে। ৭৯ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ সরকারের পরিকল্পনায় আস্থা রেখেছেন। তবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তাঁরা আস্থা রাখতে পারছেন না। এখানেও ঢাকা বিভাগের মানুষ এগিয়ে। ঢাকার ৮ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ সরকারের পরিকল্পনায় আস্থাশীল নয়।