বিদেশি ঋণের সুদহার বাড়ছে

দেশের বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ নেওয়ার পরিমাণ আরও বেড়েছে। ২০১৭ সালে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ হিসেবে ১৪৯ কোটি ৪৩ লাখ মার্কিন ডলার এসেছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি। আগের বছরের চেয়ে ২০১৭ সালে বিদেশি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৮ শতাংশ।

বিদেশি ঋণ বাড়ার পাশাপাশি ঋণের সুদহারও বাড়ছে। ২০১৭ সালে বেসরকারি খাত গড়ে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ সুদে ঋণ পেয়েছে, যা সবচেয়ে কম ছিল ২০১৫ সালে (৩ দশমিক ১ শতাংশ)। ২০১৬ সালে বিদেশি ঋণের সুদহার কিছুটা বেড়ে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হয়।

অবশ্য বিদেশি ঋণের এ সুদহার দেশি ব্যাংকের চেয়ে অনেক কম। দেশের বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক থেকে এখন ৮ থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ ও সুদের হার বৃদ্ধি আগামী বছরগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রায় দেনা পরিশোধের দায় বাড়াবে। তাই বিদেশি ঋণ ছাড় করার ক্ষেত্রে নীতির পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার।

সিপিডি চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের অর্থনীতির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে। জানতে চাইলে সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, দেশের আমদানি বৃদ্ধির সঙ্গে মিলিয়ে রপ্তানি বাড়লে বিদেশি ঋণ বিশেষ কোনো প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু বাংলাদেশে ঘাটতি সব সময় থাকে। তিনি বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশে আমদানি যে হারে বাড়বে, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় সে হারে বাড়ার সম্ভাবনা কম। সেই দিক চিন্তা করলে বিদেশি ঋণ বাড়তি চাপ তৈরি করতে পারে।

আগামী এপ্রিল মাস থেকে সরকার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু করবে। পাশাপাশি খাদ্যশস্যসহ অন্যান্য আমদানি ব্যয় বাড়বে। বড় প্রকল্পের জন্য আমদানির চাপও তৈরি হবে আগামী দিনগুলোতে।

বাংলাদেশে বিদেশি ঋণ নেওয়া শুরু ২০০৬ সালে। ওই বছর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিদেশ থেকে ঋণ নেয়। গত কয়েক বছরে এ ঋণ বাড়ছে।

বাংলাদেশে বিদেশি ঋণের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। সংস্থাটির তথ্য বিশ্লেষণ করে সিপিডি জানায়, ২০১১ সালে ২৪টি ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়, যার পরিমাণ ছিল ৯১ কোটি ডলার। ২০১৭ সালে ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয় ১৩৪টি।

দেশের ব্যবসায়ীরা সরাসরি বিদেশি সংস্থা থেকে অথবা দেশি ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং (ওবিইউ) থেকে ঋণ নিচ্ছেন। ২০১৭ সালে মোট ঋণের ৫৯ শতাংশ ছিল অফশোর ইউনিট থেকে। বিদেশি ঋণ সবচেয়ে বেশি নিচ্ছে পোশাক খাত। এখন পর্যন্ত মোট ঋণের ৬০ শতাংশই এসেছে পোশাক খাতে। এর পরের অবস্থানে আছে বিদ্যুৎ খাত। এ খাতে এসেছে ১১ শতাংশ।

সিপিডি বলছে, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যবসায়ীদের খরচ বাড়ছে। অবশ্য রপ্তানি আয় আছে, এমন প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তাদের খরচ বাড়ে না। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, তাঁরা এসব ঋণ ডলারে পেয়ে ডলারে পরিশোধ করেন। এতে ডলারের দাম বাড়ার প্রভাব পড়ে না।

অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে ঋণ নিয়ে পোশাক কারখানা করেছেন নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক। তিনি বলেন, ‘আমি তখন ৫ শতাংশের কম সুদে ঋণ নিয়েছি। তখন দেশীয় ঋণ নিয়ে ১২ শতাংশ সুদ দিতে হতো।’ তিনি বলেন, ‘রপ্তানিতে আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর কোম্পানির সঙ্গে তুলনা করতে হয়। এতে প্রতিটি পয়সার হিসাব রাখতে হয়।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, স্থানীয় ব্যাংকের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের প্রতিযোগিতায় সক্ষম করা। সে ক্ষেত্রে তাদের চেষ্টার ঘাটতি আছে। তিনি বলেন, দেশের ব্যাংকগুলোর উচ্চহারের খেলাপি ঋণ ও মূল্যস্ফীতি একটি সমস্যা। তবে ব্যাংকের আমানত ও ঋণের সুদহারের ব্যবধান কমিয়ে আনা উচিত।