পেছনের সারিতে বাংলাদেশ

* ১০টি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে ইপিআই সূচক তৈরি করা হয়।
* ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৯।
* আফ্রিকার দেশ বুরুন্ডি তালিকায় বাংলাদেশের নিচে রয়েছে।
* তালিকায় শীর্ষে ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ড।

‘এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্স (ইপিআই) ২০১৮’ শীর্ষক এক গবেষণায় পরিবেশ রক্ষায় বাংলাদেশের এমন করুণ চিত্র উঠে এসেছে।
‘এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্স (ইপিআই) ২০১৮’ শীর্ষক এক গবেষণায় পরিবেশ রক্ষায় বাংলাদেশের এমন করুণ চিত্র উঠে এসেছে।

পরিবেশ রক্ষায় বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশের একটি বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ও কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণা বলছে, পরিবেশ রক্ষা সূচকে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৯। আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত দেশ বুরুন্ডি শুধু এ তালিকায় বাংলাদেশের নিচে রয়েছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত ‘এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্স (ইপিআই) ২০১৮’ শীর্ষক এক গবেষণায় পরিবেশ রক্ষায় বাংলাদেশের এমন করুণ চিত্র উঠে এসেছে।

ইয়েল ও কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল আর্থ সায়েন্স ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক এ গবেষণাটি করেছে। গবেষণার ভিত্তিতে প্রতি দুই বছর পর পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন দেশের অবস্থান তুলে ধরতে বৈশ্বিক এ সূচক প্রকাশ করা হয়। এর আগে ২০১৬ সালের তালিকায় ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭৩। আর ২০১৪ সালের তালিকায় ১৭৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৯। অর্থাৎ প্রতিবছরই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থা আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে।

মোট ১০টি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে ইপিআই সূচক তৈরি করা হয়। এগুলো হলো বায়ুর মান, পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন, ক্ষতিকর ভারী ধাতু, জীববৈচিত্র্য ও বাসস্থান, বনায়ন, মত্স্য সম্পদ, জলবায়ু ও জ্বালানি, বায়ুদূষণ, পানিসম্পদ এবং কৃষি। ১০টি বিষয়ের প্রতিটিতে প্রাপ্ত নম্বর গড় করে বিভিন্ন দেশের অবস্থানের ক্রমতালিকা বা ইপিআই র‍্যাঙ্কিং তৈরি করা হয়। এবারের তালিকায় বাংলাদেশের সার্বিক স্কোর ২৯ দশমিক ৫৬। ২০১৬ সালের তালিকায় বাংলাদেশের সার্বিক স্কোর ছিল ৪১ দশমিক ৭৭। অর্থাৎ পরিবেশ রক্ষার বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান গত দুই বছরে আরও বেশি খারাপ হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তালিকায় বাংলাদেশের মতো খারাপ অবস্থানে আছে ভারত ও নেপাল। ভারত এ তালিকায় আছে ১৭৭ নম্বরে, নেপাল আছে ১৭৬ নম্বরে। এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কার অবস্থান সবচেয়ে ভালো। এবারের তালিকায় ৬০ দশমিক ৬১ স্কোর নিয়ে দেশটির অবস্থান ৭০তম। এ ছাড়া মালদ্বীপ ১১১, ভুটান ১৩১, আফগানিস্তান ১৬৮ এবং পাকিস্তান ১৬৯ নম্বরে রয়েছে।

এবারের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ড। দেশটির স্কোর ৮৭ দশমিক ৪২। এ তালিকার শীর্ষ দশের বাকি দেশগুলোও ইউরোপের। সুইজারল্যান্ডের পর শীর্ষ দশে রয়েছে যথাক্রমে ফ্রান্স, ডেনমার্ক, মাল্টা, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, লুক্সেমবার্গ, অস্ট্রিয়া, আয়ারল্যান্ড ও ফিনল্যান্ড। বায়ুর মান ও জলবায়ু সুরক্ষা সূচকে বিশেষ সাফল্যের কারণে সুইজারল্যান্ড তালিকার এক নম্বরে রয়েছে। সাধারণভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে জনস্বাস্থ্য রক্ষা, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ ও গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমিয়ে আনায় যেসব দেশ সাফল্য পেয়েছে, তারাই এ তালিকায় ওপরের দিকে স্থান পেয়েছে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ও ভারত তালিকার নিচের দিকে অবস্থান প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বায়ুর মান উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমিয়ে আনায় এ দুটি দেশ পিছিয়ে আছে।

বিশ্বে বায়ুর সার্বিক মান সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বায়ুর মান এখন সবচেয়ে বড় পরিবেশগত হুমকি হয়ে উঠেছে। ২০১৬ সালের গবেষণা অনুযায়ী, পরিবেশদূষণের শিকার হয়ে এখন সারা বছর যত লোক বিশ্বে মারা যায়, তার দুই-তৃতীয়াংশ মৃত্যু ঘটে বায়ুদূষণের কারণে। ভারত ও চীনের মতো উদীয়মান শিল্পের দেশে বায়ুদূষণের সমস্যা এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে।

জানতে চাইলে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশদূষণ রক্ষায় আইন ও প্রতিষ্ঠানের অভাব নেই, কিন্তু আইনের প্রয়োগে বড় দুর্বলতা রয়েছে। শুধু সরকার নয়, ব্যক্তি পর্যায়েও এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি ও আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।