দুই বছরের কমিটি থাকছে সাড়ে তিন বছর

>

• বিজিএমইএর বর্তমান কমিটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
• আগে প্রথম দফায় কমিটির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়েছিল।
• সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কমিটির মেয়াদ নতুন করে বাড়িয়েছে।

তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর বর্তমান কমিটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এর আগে প্রথম দফায় এই কমিটির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়েছিল। ফলে দুই বছরের জন্য গঠিত কমিটির মেয়াদ এখন পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন বছরে। গতকাল সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নতুন করে মেয়াদ বাড়িয়েছে। এর ফলে সংগঠনটির সমঝোতার নির্বাচনের উদ্যোগও আপাতত কাজে লাগছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত ২১ সেপ্টেম্বর। তবে উত্তরায় নতুন ভবন নির্মাণকে পুঁজি করে আগেই ছয় মাস মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়েছিলেন বিজিএমইএর সভাপতি। সেই বাড়তি সময়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আগামী ২১ মার্চ। তাই গত ডিসেম্বরে নির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা হয়েছিল। ৭ মার্চ ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা। তবে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান গত রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সংগঠনটির বর্তমান কমিটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর আবেদন করেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে, অর্থাৎ গতকালই কমিটির সেই আবেদন অনুমোদন করে মন্ত্রণালয়।

এদিকে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পরই সিদ্দিকুর রহমান বিজিএমইএর নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলামিনকে চিঠি দেন। এতে ২০১৮-২০ মেয়াদের নির্বাচনের সব কার্যক্রম বাতিল করার অনুরোধ জানান তিনি।

কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করে গতকাল সন্ধ্যায় বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, উত্তরায় নতুন ভবন নির্মাণ, নতুন মজুরি বোর্ড গঠন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে আগামী এক বছর পোশাক খাতের জন্য কঠিন সময়। বিষয়টি অনুধাবন করে পোশাকশিল্পের বড় ব্যবসায়ীরা সরকারকে অনুরোধ করেছেন বর্তমান কমিটির মেয়াদ বাড়ানোর। সংগঠনের সাবেক সভাপতিরাও বিষয়টি নিয়ে একমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, সংগঠনের বর্তমান কমিটিকে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্ব পালনে অনুমতি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

এদিকে নেতৃত্ব নির্বাচনে বিজিএমইএতে সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম নামে দুটি পক্ষ আছে। গত বছরের শেষের দিকে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতিরা সমঝোতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়ে একমত হন। তাতে সভাপতির পদটি পাওয়ার কথা ফোরামের। একই সঙ্গে সাতটি সহসভাপতি ও ২৭টি পরিচালক পদ উভয় পক্ষের মধ্যে ভাগাভাগি হবে। সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের নেতারা যাঁদের সবুজ সংকেত দেবেন, কেবল তাঁরাই মনোনয়নপত্র কিনবেন এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন। তবে সমঝোতার বিষয়টি ২০১৫ সালেই চূড়ান্ত হয়েছিল।

সে বছর সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের জ্যেষ্ঠ নেতারা দুই মেয়াদের জন্য বিজিএমইএর নেতৃত্ব ভাগাভাগির বিষয়ে চুক্তি করেন। এ জন্য প্রথম মেয়াদে সম্মিলিত পরিষদ সভাপতি ও চারটি সহসভাপতির পদ পায়। সেই কমিটিই বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছে।

ফোরামের পক্ষ থেকে সভাপতি পদে রুপা সোয়েটারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল ইসলামের নাম দেওয়া হয়। তিনি দুই মেয়াদে বিজিএমইএর সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাঁর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পরিষদের নেতারা। শেষ পর্যন্ত শহীদুল ইসলামের নামই চূড়ান্ত হয়। অন্যদিকে হঠাৎ করেই ১১ জানুয়ারি স্বাধীনতা পরিষদ নামে নতুন একটি পক্ষ আত্মপ্রকাশ করে। এই পক্ষের নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেন। তবে আপাতত সমঝোতা কিংবা ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন কোনোটাই হচ্ছে না।

সংগঠনের একাধিক সাবেক ও বর্তমান নেতা জানান, কয়েক দিন ধরেই কমিটির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কয়েকজন নেতা সরকারের উচ্চমহলে দেন-দরবার করে সবুজ সংকেত আদায় করেন। সে জন্য নেতৃত্ব নির্বাচনে সমঝোতার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সাবেক সভাপতিরাও চুপসে যান। যদিও তাঁরা গত বছরের শেষ দিকে  চুক্তি অনুযায়ী সমঝোতার কমিটি করতে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সাবেক একজন সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে চাইলে অবশ্যই আমরা বিষয়টি মেনে নেব। তবে বর্তমান কমিটির মেয়াদ বাড়ানোয় সাবেক সভাপতিরা বিচলিত।