সাত হাজার টাকার লুঙ্গি!

জারা ব্র্যান্ডের চেক মিনি স্কার্ট দেখতে লুঙ্গির মতোই। জারার ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত
জারা ব্র্যান্ডের চেক মিনি স্কার্ট দেখতে লুঙ্গির মতোই। জারার ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত

একখানা লুঙ্গির দাম সাত হাজার টাকার ওপরে। সেই লুঙ্গি আবার মিলছে জারার মতো বিশ্বখ্যাত স্প্যানিশ ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্রে। কথাগুলো গোলমেলে মনে হলেও ঘটনা কিন্তু সত্য। 

বাংলাদেশের পুরুষদের কাছে লুঙ্গি ব্যাপক জনপ্রিয়। টিউব আকৃতির এই পোশাকটি কোমরে পেঁচিয়ে সামনে একটা গিঁট দিয়ে পরতে হয়। শুধু দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নয়, আরব বিশ্ব বা পূর্ব আফ্রিকার কোনো কোনো দেশেও লুঙ্গির চল আছে। গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়ার দেশে লুঙ্গির মতো আরামদায়ক পোশাক আর হয় না। দামও খুব বেশি নয়, কয়েক ডলার মাত্র। বাংলাদেশে দেড় শ–দুই শ টাকায় লুঙ্গি মেলে। ব্র্যান্ডের লুঙ্গির দাম কিছুটা বেশি, তবু হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। তবে আধুনিক সমাজে পোশাকটি কিছুটা অবহেলিত। অনেকেই অবশ্য লুঙ্গি দেখলে নাক সিটকান।
বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড জারা ‘চেক মিনি স্কার্ট’ নামে একটি পোশাক বাজারে ছেড়েছে। দেখতে একেবারেই লুঙ্গির মতো। তবে পেছনে একটা জিপার আছে, সেটা সেলাইয়ের ভাঁজের মধ্যে লুকানো। ‘মিনি স্কার্ট’ পরা কৃষ্ণাঙ্গ এক নারী মডেলের ছবি নিজেদের ওয়েবসাইটে সেঁটে দিয়েছে জারা। পোশাকটির মূল্য রাখা হয়েছে ৮৯ দশমিক ৯০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার দাম দাঁড়ায় ৭ হাজার ৩৭১ টাকা।
জারার এই পোশাক নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আর বিদ্রূপের ঝড় বয়ে যাচ্ছে টুইটার-ফেসবুকে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জারা তাদের ওই পোশাককে যে নামেই ডাকুক, টুইটারে যে বিতর্ক এখন চলছে, সেখানে একটা বিষয়ে ঐকমত্য দেখা যাচ্ছে, এটি আসলে লুঙ্গি ছাড়া আর কিছু নয়!
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, জারার ক্যাটালগে পোশাকটি দেখে অনেকেই তাঁদের বিস্ময় চেপে রাখতে পারছেন না। যে পোশাকটি পুরুষদের পোশাক হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত সবাই, বাবা-চাচারা যে পোশাক পরেন, সেটি কীভাবে মেয়েদের ফ্যাশন হয়ে উঠল, সেই প্রশ্ন অনেকের। আর এই লুঙ্গিকে ‘স্কার্ট’ নামে চালিয়ে যে দামে বিক্রি করা হচ্ছে, সেটার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে চোখ কপালে তুলছেন অনেকে। ব্রিটেনে জারা পোশাকটি বিক্রি করছে ৬৯ পাউন্ডে।
পুরুষদের পোশাক লুঙ্গিকে এভাবে ‘স্কার্ট’ নামে চালিয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে টুইট করেছেন অনেকে। তাঁদের প্রশ্ন, কেন জারা একটিবারের জন্যও কোথাও উল্লেখ করল না এই পোশাকের আসল নাম বা কোত্থেকে এই ফ্যাশনের অনুপ্রেরণা তারা পেয়েছে। অন্য দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এভাবে ভিন্ন নামে বাজারজাত করে চড়া মূল্যে বিক্রি করে মুনাফা করা কতটা নৈতিক, সেই প্রশ্নও আছে।
পোশাক বিক্রির জগতে জারার অভিজ্ঞতা ৪৩ বছরের। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্র্যান্ডটির দুই হাজারের বেশি বিক্রয়কেন্দ্র আছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন পোশাক কারখানা থেকে নিজেদের জন্য পোশাক তৈরি করে নামীদামি এই ব্র্যান্ডটি।