তরঙ্গ নিলামে যেতে ২ অপারেটরের আগ্রহ

  • ১৩ ফেব্রুয়ারি নিলাম।
  • নিলামে অংশ নিতে টাকা জমা দিয়েছে গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক।
  • টাকা জমা দেয়নি রবি ও সিটিসেল।
  • টেলিটক আগ্রহ দেখায়নি, অর্থও জমা দেয়নি।

দেশে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোর–জি) টেলিযোগাযোগ সেবা চালুর জন্য তরঙ্গ নিলামে অংশ নিতে দুটি মোবাইল ফোন অপারেটর আবেদন করেছে। এরা হলো গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক। অপারেটর দুটি নিলামে অংশ নেওয়ার জন্য নির্ধারিত অর্থ (বিড আর্নেস্ট মানি) জমা দিয়েছে।

তবে রবি আজিয়াটা ও সিটিসেল আগে তরঙ্গ নিলামে অংশ নেওয়ার আগ্রহ দেখালেও শেষ পর্যন্ত অর্থ জমা দেয়নি। সিটিসেলের কার্যক্রম অবশ্য বন্ধ রয়েছে। সরকারের মালিকানাধীন টেলিটক আগ্রহও দেখায়নি, অর্থও জমা দেয়নি।

তিনটি ব্যান্ডের তরঙ্গ বিক্রির জন্য ১৩ ফেব্রুয়ারি নিলাম আয়োজনের তারিখ নির্ধারণ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। তিনটি ব্যান্ড হলো ৯০০ মেগাহার্টজ, ১ হাজার ৮০০ মেগাহার্টজ ও ২ হাজার ১০০ মেগাহার্টজ। নিলামের নীতিমালা অনুযায়ী, ৯০০ ও ১ হাজার ৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের তরঙ্গ নিলামের ক্ষেত্রে প্রতি মেগাহার্টজের ভিত্তিমূল্য ঠিক করা হয়েছে ৩ কোটি মার্কিন ডলার। আর ২ হাজার ১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের তরঙ্গের ভিত্তিমূল্য প্রতি মেগাহার্টজে ধরা হয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। নিলামে প্রতিটি ব্যান্ডের অংশ নেওয়ার বিড আর্নেস্ট মানি ১৫০ কোটি টাকা করে।

তরঙ্গ নিলাম থেকে সরকার অন্তত ১১ হাজার কোটি টাকা আয় করতে চায়।

ফোর–জি সেবা চালুর লাইসেন্সের জন্য গত জানুয়ারিতে পাঁচটি মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা, বাংলালিংক, টেলিটক ও সিটিসেল বিটিআরসির কাছে আবেদন করে।

জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তরঙ্গ নিলামে অংশ নিতে গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক আবেদন করেছে। রবি ও সিটিসেল আবেদন জমা দেয়নি।

বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, রবি আজিয়াটা ফোর–জি সেবা দিতে তরঙ্গ ব্যবহারে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার জন্য বিটিআরসিতে আবেদন করেছে। প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা (টেকনোলজি নিউট্রালিটি) হলো যেকোনো তরঙ্গে যেকোনো প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ সেবা দেওয়ার সুবিধা। বাংলাদেশে মুঠোফোন অপারেটররা বর্তমানে দ্বিতীয় (টু–জি) ও তৃতীয় (থ্রি–জি) প্রজন্মের সেবার জন্য তিনটি আলাদা ব্যান্ডের তরঙ্গ ব্যবহার করে। এই তিনটি ব্যান্ড হলো ৯০০, ১ হাজার ৮০০ ও ২ হাজার ১০০ মেগাহার্টজ। প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা পেলে এই তিনটি ব্যান্ডের তরঙ্গ দিয়েই টু–জি, থ্রি–জি ও ফোর–জি সেবা দিতে পারবে মুঠোফোন অপারেটররা।

প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার জন্য আলাদা মূল্য দিতে হবে মোবাইল ফোন অপারেটরদের। একটি অপারেটরের কাছে থাকা সব তরঙ্গ একসঙ্গে প্রযুক্তি নিরপেক্ষ করা হলে মেগাহার্টজপ্রতি তরঙ্গের দাম পড়বে ৪০ লাখ ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৩২ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮০ টাকা হিসাবে)। আর আংশিক তরঙ্গ প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে দাম দিতে হবে ৭৫ লাখ ডলার বা ৬০ কোটি টাকা।

দেশের চার মোবাইল ফোন অপারেটর মিলিয়ে ৯০০ ও ১ হাজার ৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে বর্তমানে ৭৮ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ তরঙ্গ প্রযুক্তি নিরপেক্ষ করার সুযোগ আছে। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের ২২ মেগাহার্টজ, রবি আজিয়াটার ২৬ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ, বাংলালিংকের ১৫ মেগাহার্টজ ও টেলিটকের ১৫ দশমিক ২ মেগাহার্টজ তরঙ্গ আছে। থ্রি–জি সেবার জন্য ব্যবহৃত ২ হাজার ১০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ শুরু থেকেই প্রযুক্তি নিরপেক্ষ।

বর্তমানে চালু থাকা চার অপারেটরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তরঙ্গ আছে রবি আজিয়াটার। সব ব্যান্ড মিলিয়ে অপারেটরটির তরঙ্গের পরিমাণ ৩৬ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ। গ্রামীণফোনের মোট তরঙ্গের পরিমাণ ৩২ মেগাহার্টজ ও টেলিটকের ২৫ দশমিক ২ মেগাহার্টজ তরঙ্গ আছে। গ্রাহকসংখ্যা বিবেচনায় সবচেয়ে কম তরঙ্গ বাংলালিংকের। ৩ কোটি ২৮ লাখ গ্রাহক নিয়ে অপারেটরটির তরঙ্গের পরিমাণ ২০ মেগাহার্টজ।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বাংলালিংকের তরঙ্গের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। নতুন তরঙ্গ না নিলে ফোর–জি সেবা চালু করাই অপারেটরটির জন্য কঠিন হবে। আর সাড়ে ৬ কোটির বেশি গ্রাহকের জন্য গ্রামীণফোনেরও নতুন তরঙ্গ প্রয়োজন। এ জন্য অপারেটর দুটি তরঙ্গ নিলামে অংশ নিতে আর্নেস্ট মানি জমা দিয়েছে।