রায়ের দিনে ব্যবসার ক্ষতি

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়কে কেন্দ্র করে গতকাল খুলনার অধিকাংশ দোকানই খোলেনি। যঁারা খুলেছেন তঁাদের মধ্যে ছিল একধরনের আতঙ্ক। ক্রেতা না থাকায় বেচাকেনাও খুব একটা জমেনি। খুলনার কে ডি ঘোষ সড়কে।  সাদ্দাম হোসেন
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়কে কেন্দ্র করে গতকাল খুলনার অধিকাংশ দোকানই খোলেনি। যঁারা খুলেছেন তঁাদের মধ্যে ছিল একধরনের আতঙ্ক। ক্রেতা না থাকায় বেচাকেনাও খুব একটা জমেনি। খুলনার কে ডি ঘোষ সড়কে। সাদ্দাম হোসেন
>
  • বিভিন্ন পণ্যের খুচরা ও পাইকারি বাজারে কেনাবেচা হয়নি।
  • বিপণিবিতান ফাঁকা ছিল।
  • কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে যায়নি সাধারণ মানুষ।
  • হরতালের মতো কর্মসূচি না দেওয়ায় বিএনপিকে ধন্যবাদ ব্যবসায়ীদের।

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানীতে যে থমথমে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যেও। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শপিং মলগুলোতে ক্রেতা ছিল না। রাস্তার পাশের বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল। অনেক জায়গায় ফুটপাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বসতে দেওয়া হয়নি। কাঁচাবাজারেও কেনাকাটা করতে যায়নি সাধারণ মানুষ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, একটি কার্যকর হরতালের দিনে ব্যবসা-বাণিজ্যে যে রকম ক্ষতি হয়, খালেদা জিয়ার রায়ের দিনও খুচরা পর্যায়ে কেনাকাটায় একই রকমের ক্ষতি হয়েছে। অবশ্য কারখানায় উৎপাদন চলেছে। রপ্তানি বাণিজ্যেও তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। এদিকে রায়ের প্রতিবাদে বিএনপি হরতাল অথবা অবরোধের মতো অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর কর্মসূচি না দেওয়ায় খুশি ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, এটা দেশের রাজনীতির জন্য একটি ভালো দিক হিসেবে গণ্য হবে।

রায়ের দিন খুচরা পর্যায়ে কেনাবেচার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি রেজাউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিস্থিতির কারণে রাস্তাঘাটে মানুষের সংখ্যা কম ছিল। এতে কেনাবেচা তেমন একটা হয়নি। আমরা আশা করছি আজ শুক্রবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’

রাজধানীর পুরান ঢাকার বিভিন্ন পণ্যের পাইকারি বাজারে থমথমে পরিস্থিতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে। মৌলভীবাজার, চকবাজার, নাজিমুদ্দিন রোডসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল বলে জানান সেখানকার ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ দোকান খুললেও ক্রেতা ছিল খুবই কম। জানতে চাইলে মৌলভীবাজারের ভোজ্যতেল ও চিনি ব্যবসায়ী আবুল হাশেম বলেন, ‘আমি দোকান খুলেছিলাম। বেচাকেনা একেবারেই হয়নি। ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেনও কম হয়েছে। ক্রেতারা ধরেই নিয়েছিলেন যে সুবিধা করা যাবে না। এ কারণে যাঁরা দোকান খুলেছেন, তাঁদেরও বিশেষ কোনো লাভ হয়নি।

রাজধানীর বড় শপিং মলের একটি বসুন্ধরা সিটিও গতকাল খোলা ছিল। কিন্তু অন্যান্য দিনের মতো সেখানে ক্রেতা ছিল না। ফলে দোকানমালিকেরা দোকান খুলে তেমন কোনো কেনাবেচা করতে পারেননি। বসুন্ধরার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও অলংকার ব্যবসায়ী এম এ হান্নান আজাদ বলেন, মানুষের মনে উদ্বেগ ছিল যে কী হয়, না হয়। এতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেনাকাটা করতে মানুষজন ঘর থেকে বের হয়নি। তিনিও আশা প্রকাশ করেন, আজ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

ঢাকায় সপ্তাহের একেক দিন একেক এলাকার দোকানপাট বন্ধ থাকে। গতকাল বন্ধের দিন ছিল মোহাম্মদপুর, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, নিউ বেইলি রোড ও লালমাটিয়া এলাকা। ফলে ওই সব এলাকার দোকানপাট স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ ছিল।

রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতেও গতকাল কেনাবেচা কম হয়েছে। স্বাভাবিক দিনের চেয়ে ক্রেতার সংখ্যা ছিল অনেক কম। অবশ্য আগের দিন রাতে ঢাকায় তরিতরকারি আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এতে পণ্যের দামেও তেমন কোনো হেরফের হয়নি। দুপুরের পর যখন খালেদা জিয়ার মামলার রায় ঘোষণা হয়, তখন কারওয়ান বাজারের অনেক দোকানই বন্ধ ছিল। ক্রেতার অভাবে বিক্রেতারা অলস সময় কাটাচ্ছিলেন। জানতে চাইলে সবজি বিক্রেতা মো. শাহ আলম বলেন, পুরো দিনটাই খারাপ গেছে। বিক্রি কম হয়েছে।

কারওয়ান বাজারের সবজির আড়তের মালিক লোকমান হোসেন বলেন, বুধবারের সঙ্গে তুলনা করলে বৃহস্পতিবার বেচাকেনা কম হয়েছে। তবে পাইকারি বাজারে ভোর ছয়টার মধ্যে কেনাবেচা শেষ হয় বলে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। তিনি বলেন, খুচরা বিক্রেতাদের অনেকে শুক্রবারে বিক্রির জন্য সবজি কিনে নিয়ে গেছেন। তাঁদের আশঙ্কা ছিল, রায়ের পরে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।

হরতাল না আসায় খুশি ব্যবসায়ীরা

খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের প্রতিবাদে বিএনপি ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো কর্মসূচি না দেওয়ায় ব্যবসায়ীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, খালেদা জিয়ার মামলা একটি বিচারাধীন বিষয়। নিম্ন আদালতে তাঁর সাজা হয়েছে। এখন উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ আছে। তিনি বলেন, ‘বিএনপি অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর কোনো কর্মসূচি দেয়নি। এ জন্য আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই।’ তিনি বলেন, রাজনীতিতে একটি গুণগত পরিবর্তন এসেছে। ক্ষতিকর কর্মসূচি পরিহার করার বিষয়টি এখন মানুষের চাহিদায় পরিণত হয়েছে। রাজনীতিবিদেরা জনগণের কল্যাণের জন্যই রাজনীতি করেন।

সার্বিক বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সহনশীলতা দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এটা ভালো লক্ষণ।