যশোরের বাঁধাকপি বিশ্ববাজারে

বিদেশে রপ্তানির জন্য বিষমুক্ত বাঁধাকপি প্যাকেটজাত করছেন শ্রমিকেরা। সম্প্রতি যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আবদুলপুর গ্রামে।  ছবি: এহসান-উদ-দৌলা
বিদেশে রপ্তানির জন্য বিষমুক্ত বাঁধাকপি প্যাকেটজাত করছেন শ্রমিকেরা। সম্প্রতি যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আবদুলপুর গ্রামে। ছবি: এহসান-উদ-দৌলা

মৌসুমের শুরুতে যশোর থেকে ১৪০ মেট্রিক টন বাঁধাকপি সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ব্রুনেইয়ে রপ্তানি করা হয়েছে। আরও ৪৮ মেট্রিক টন তাইওয়ানে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। যশোরের বাঁধাকপি বিশ্ববাজারে পাঠানোর কারণে প্রান্তিক কৃষকেরা সবজির ন্যায্য দাম পাচ্ছেন। তাতে সবজিচাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।

কৃষি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ঢাকার রিফাত এন্টারপ্রাইজ নামের একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান যশোরের সবজি বিশ্ববাজারে রপ্তানি করছে। নিরাপদ ব্যবস্থাপনায় সবজি উৎপাদনের জন্য ইতিমধ্যে যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ও চূড়ামনকাটি ইউনিয়নের ১৬১ জন কৃষকের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা চুক্তিবদ্ধ কৃষকের মাঠ থেকেই বাজারমূল্যে বাঁধাকপি কিনে নিচ্ছেন।

রিফাত এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী কাজী মুন্নী প্রথম আলোকে বলেন, জানুয়ারি মাসে তিনটি চালানের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ব্রুনেইয়ে ১৪০ মেট্রিক টন বাঁধাকপি রপ্তানি করা হয়েছে। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসে তাইওয়ানে আরও ৪৮ মেট্রিক টন বাঁধাকপি রপ্তানি করা হচ্ছে। প্রায় কোটি টাকা মূল্যের এ কপি বিশ্ববাজারে পাঠানোর কারণে কৃষকেরা এখন লাভবান হচ্ছেন। সেই সঙ্গে দেশের জাতীয় অর্থনীতির ভিত মজবুত হচ্ছে।

যশোর সদর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের চুক্তিবদ্ধ কৃষক রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘অন্য বছর বাঁধাকপির চাষ করে ততটা লাভবান হতে পারিনি। কারণ, মৌসুমের এ সময়ে তেমন দাম থাকে না। তখন মাঠেই গরু দিয়ে বাঁধাকপি খাইয়ে দিতে হতো। কিন্তু এ বছর বাঁধাকপি বিদেশে রপ্তানি হওয়ার কারণে এখনো ১২ টাকা মূল্যে মাঠ থেকে বিক্রি করা যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, এ বছর খরচ বাদে প্রতি বিঘায় অন্তত ৫০ হাজার টাকা করে লাভ থাকবে। আমি সাড়ে চার বিঘায় এবার বাঁধাকপি উৎপাদন করেছি। এ পর্যন্ত রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে ১৫ হাজার কপি বিক্রি করেছি। আরও দুই বিঘার কপি এখনো রয়েছে।’

চুক্তিবদ্ধ আরেক কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি চার বিঘায় বাঁধাকপির চাষ করেছি। এ বছর দাম ভালোই পেলাম। ছোট-বড় মিলে গড়ে ১২ টাকা করে প্রতিটি কপি এখন মাঠ থেকে বিক্রি হচ্ছে। এতে আমরা খুব খুশি। আগে উৎপাদিত সবজি বিক্রির একটা বড় ঝামেলা ছিল। কিন্তু এখন আর সেই ঝামেলা নেই।’

কৃষকের মাঠ থেকে সবজি সংগ্রহ করে রপ্তানির জন্য প্রক্রিয়াজাত করতে যশোর সদর উপজেলার বড় হৈবতপুর ও আবদুলপুরে ‘কৃষিপণ্য সংগ্রহ ও বিপণনকেন্দ্র নামে দুটি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দ্বিতীয় শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের আওতায় এ কেন্দ্র দুটি স্থাপন করা হয়।

সম্প্রতি বড় হৈবতপুর কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, রপ্তানির জন্য বাঁধাকপি মাঠ থেকে সংগ্রহ করে কেন্দ্রে আনা হচ্ছে। শ্রমিকেরা তা কেটে পরিষ্কার করে নিউজপ্রিন্টের সাদা কাগজে মুড়িয়ে প্যাকেজিং করার কাজ করছেন। পরে সেগুলো কেন্দ্রের বিশেষ ঘরে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে যশোরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘নিরাপদ ব্যবস্থাপনায় সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে কি না, তা তদারক করা হয়। যথাযথ মানে প্রক্রিয়াজাতকরণের পর কৃষি বিভাগ থেকে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়। এরপর রপ্তানি হয়।’ তিনি আরও বলেন, বছরের শুরুতে বাঁধাকপি রপ্তানি শুরু হয়েছে। এরপর সারা বছর ধরে কাঁচা মরিচ, করলা, পটোল, মিষ্টিকুমড়া, কাঁকরোল ও আলু রপ্তানি করা হবে।

রপ্তানিকারক কাজী মুন্নী বলেন, ‘প্রথম তিনটি চালান চট্টগ্রামের নৌবন্দর দিয়ে তিন দেশে পাঠানো হয়েছে। চতুর্থ চালানটি তাইওয়ানে পাঠাতে আমরা মোংলা নৌবন্দর বেছে নিয়েছি। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি করলে খরচ বেশি হয়। তাই আমরা মোংলা বন্দর দিয়ে রপ্তানিতে আগ্রহী। কিন্তু এ বন্দরে পর্যাপ্ত জাহাজ নেই। এ বন্দরে সপ্তাহে অন্তত একটি জাহাজ দিলে আমাদের পরিবহন খরচ কমবে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে আমরা আরও কম মূল্যে সবজি পাঠাতে পারব। এ জন্য আমরা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’