ট্রাম্প ও ফেডের যুদ্ধ শুরু হলো বলে

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প
ফেডারেল রিজার্ভ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও কংগ্রেসের কাছে দায়বদ্ধ। কংগ্রেসকে আবার প্রেসিডেন্টের কথায় কর্ণপাত করতে হয়।
হোয়াইট হাউস ও ফেডারেল রিজার্ভের মধ্যে সুদের হার নিয়ে বিবাদ শুরু হবে বলে দীর্ঘদিন ধরে যে ধারণা করা হচ্ছিল, তা গত এক বছরে বারবার স্থগিত হয়েছে। এই সময় যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার উঠেছে, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে; কিন্তু ফেডের কোনো কাজে অর্থনীতির স্বাভাবিক প্রফুল্লতা নষ্ট হয়নি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও ফেডের সাবেক চেয়ারম্যান জ্যানেট ইয়েলেনের সঙ্গে ভালোভাবেই খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। ঘটনাটি ইতিহাসের পাতায় বিখ্যাত হয়ে থাকবে।

এই প্রশান্তির অবসান হয়েছে বেশ জোরালোভাবেই। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, নতুন নেতৃত্বে ফেড মূল্যস্ফীতির ধাক্কা ঠেকাতে সুদের হার বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্বসহকারে ভাবছে। অর্থনীতির পতন ঠেকাতে তারা হুড়োহুড়ি শুরু করেছে।
২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ২ শতাংশ পড়ে যায়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটেসটিকস যখন ঘোষণা দিল, জানুয়ারি মাসে চাকরিজীবীদের ঘণ্টাপ্রতি আয় ২ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে, তখন পরবর্তী অধিবেশনে এই সূচকের পতন হয় ৪ শতাংশ। মজুরি বাড়ার কারণে এমন সম্ভাবনা আছে যে ফেড মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় আগ্রাসী হবে।
ট্রাম্প শেয়ারের দরপতনের ঘটনা মুছে ফেলতে পারবেন না, যদিও তিনি বারবার বলেছেন, পতনের আগে শেয়ারের দাম যে বেড়েছিল, সেটা তাঁর প্রেসিডেন্সির বৈধতা দিয়েছে। জানুয়ারির ৩০ তারিখে তিনি স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে গর্বভরে বলেছিলেন, তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর ‘শেয়ারবাজারে একের পর এক নতুন রেকর্ড হয়েছে। এই সময়ে মূল্য বেড়েছে আট ট্রিলিয়ন ডলার।’ এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি টুইট বার্তায় ট্রাম্প বলেন, শেয়ারবাজারের পতন এক ‘বড় ভুল’। ‘অর্থনীতিসংক্রান্ত অনেক ভালো খবর আসছে’।
কিন্তু এটা যদি নিছক মৃদু ধাক্কার পর্যায়ে না থাকে, তাহলে ট্রাম্প কাউকে খুঁজবেন, যার ওপর দোষ চাপানো যায়। আর সেই ব্যক্তি হতে পারেন জেরোম ‘জে’ পাওয়েল, যিনি ৫ ফেব্রুয়ারি ফেডের চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ নিয়েছেন। ফেড স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও কংগ্রেসের কাছে দায়বদ্ধ, যে কংগ্রেসকে আবার প্রেসিডেন্টের কথায় কর্ণপাত করতে হয়। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সাবেক নীতিপ্রণেতা অ্যাডাম পোসেন বলেছেন, ‘আমি মনে করি না ফেড কোনোভাবে হোয়াইট হাউসের ভয়ে ভীত। কিন্তু তারা কংগ্রেসকে ভয় পায় ও শ্রদ্ধা করে, আর কংগ্রেসের ওপর ট্রাম্পের প্রভূত কর্তৃত্ব আছে।’
তবে ট্রাম্পই প্রথম নন, এর আগেও অনেক প্রেসিডেন্ট সুদের হার কম রাখার জন্য ফেডের প্রধানকে চাপ দিয়েছেন। ১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট লিনডন জনসন উইলিয়াম ম্যাচিনজির ওপর চাপ দিয়ে সফল হননি। তবে রিচার্ড নিক্সন ১৯৭১ সালে উইলিয়ামের উত্তরসূরি আর্থার বার্নসকে চাপ দিয়ে সুদের হার কমাতে সফল হন। বার্নসের জলবৎ তরলং মুদ্রানীতির কারণে মূল্যস্ফীতি অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। পোসেন বলেন, সুদের হার এতটা বাড়ানোর দরকার নেই, যার কারণে ট্রাম্পের সঙ্গে ফেডের সম্পর্ক চূড়ান্ত পর্যায়ে যেতে পারে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট অসন্তুষ্ট হলে তাঁর জিব কেউ টেনে ধরে রাখতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে তিনি হয়তো মধ্যরাতে টুইট বার্তায় পাওয়েলের দিকে তোপ দাগবেন।
রিপাবলিকান ঘরানার মানুষ পাওয়েল জর্জটাউন ও প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়েছেন। তাঁর যেমন সরকারি কাজের অভিজ্ঞতা আছে, তেমনি ওয়ালস্ট্রিটেরও। লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে, তিনি চাপ সামলাতে সক্ষম। তবে এ জন্য তাঁকে নিজের সব ক্ষমতা জড়ো করতে হবে। ফেডারেল রিজার্ভের সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস প্লোসার বলেছেন, ‘ফেডকে রাজনৈতিক প্রভাবাধীনে আনার জন্য চাপ দেওয়া হতে পারে, আমি শঙ্কিত। ডান ও বাম উভয় তরফ থেকেই তা আসার মতো যথেষ্ট প্রলোভন আছে।’ কিন্তু ফেড তাতে আরও শক্তিশালী হবে বলে তিনি মনে করেন।
উল্লেখ্য, মার্কিন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। এ কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মানে হলো, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ হয়তো শিগগিরই সুদের হার বাড়াবে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়ার অনেক বিনিয়োগকারী বাজার থেকে টাকা তুলে নিয়েছেন। আর সে কারণেই পৃথিবীজুড়ে শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে। ট্রাম্প এখন সুদের হার বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাগড়া দিতে পারেন। সূত্র: ব্লুমবার্গ