ফারমার্সকে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি

>
  • বাংলাদেশ ব্যাংকে সভা।
  • মূলধন দিয়ে পর্ষদে বসতে চায় অর্থ জোগানদাতা ব্যাংকগুলো।
  • আগ্রহী না ফারমার্স ব্যাংক।
  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডাকে গোপনীয়তার মধ্যে সভা।

এ সভার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। গণমাধ্যমের কোনো কর্মীকে প্রধান ভবনে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে সভায় উপস্থিত লোকজনকেও নিষেধ করা হয়।

সভা থেকে বেরিয়ে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে বিবৃতি দেবে। তবে গতকাল রাত সোয়া আটটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সূত্র জানায়, ফারমার্স ব্যাংকের পরিস্থিতি উন্নত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে। চেয়ারম্যান, নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিবর্তনের পর নতুন করে তাঁদের টাকা জমা ও মূলধন দেওয়ার জন্য বলা হয়। এ উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইঙ্গিতে পর্ষদে পরিবর্তন আসে। নতুন পর্ষদ তারল্যসংকট কাটাতে উদ্যোগ নেয়। নিজেরা কোনো টাকা না দিয়ে আবারও সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ সংগ্রহের প্রস্তাব দেয় ফারমার্স ব্যাংক। তবে ব্যাংকগুলো সংকটে পড়া এ ব্যাংকে নতুন করে টাকা দেওয়ার আগ্রহ দেখায়নি। এরপর গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে সভা আহ্বান করে চেয়ারম্যান ও এমডিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়।

সভা সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে মূলধন জোগানের প্রস্তাব দেওয়া হলে ব্যাংকগুলো আরও ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্তের কথা জানায়। কী পদ্ধতিতে ব্যাংকটিকে সহায়তা করা হবে, তা নিয়ে আরও পর্যালোচনার কথা জানায়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলধন জোগানের চিন্তার পাশাপাশি কল মানি বা ধার দেওয়ার কথাও বলা হয়। এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

ব্যাংকগুলো বলছে, আইসিবির নেতৃত্বে জোট গঠন করে অর্থায়ন করা হলে ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালনায় অর্থ জোগানদাতা ব্যাংকগুলোর কোনো ভূমিকা থাকবে না। তাই ব্যাংকগুলো মূলধন হিসেবে টাকা দিতে চায়, পাশাপাশি ফারমার্স ব্যাংকের পর্ষদেও বসতে চায়। কারণ নতুন করে ব্যাংকটি খারাপ করলে টাকা ফেরত পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। আর অর্থায়নের দায় আসবে বর্তমান পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা কমিটির ওপর। তবে ফারমার্স ব্যাংকের বর্তমান পর্ষদ তাতে রাজি না।

 সভার বিষয়ে জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোন প্রক্রিয়ায় অর্থায়ন করা হবে, তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা চাই মূলধন দিয়ে পর্ষদে বসতে।’

আইসিবির চেয়ারম্যান মুজিব উদ্দিন আহমেদ সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যাংকটিকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না। দেখা হচ্ছে কী প্রক্রিয়ায় সাহায্য করা যায়। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

ফারমার্স ব্যাংক প্রতিষ্ঠার শুরুতেও আইসিবি অর্থায়ন করেছে, এরপরও কেন এ অবস্থা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শুরুর দিকে পর্ষদে আইসিবির প্রতিনিধি ছিল। পরে আর ছিল না।’

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি ফারমার্স ব্যাংককে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা দিয়ে সহায়তার পক্ষে সম্মতি দেন। তবে কী প্রক্রিয়ায় এ টাকা দেওয়া হবে, সেটি নিয়েই আলোচনার জন্য গতকাল সভা ডেকেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সংকটে পড়ে ব্যাংকটি বর্তমানে গ্রাহকের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না ফারমার্স ব্যাংক। পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ায় গত নভেম্বরে পদ ছাড়তে বাধ্য হন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী। ব্যাংকটির এমডি এ কে এম শামীমকেও অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদকে চেয়ারম্যান ও মারুফ আলমকে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। তাঁদের সরিয়ে গত জানুয়ারিতে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা চৌধুরী নাফিজ সারাফাত।