এলএনজি এপ্রিলে

  • প্রতিদিন ৫ কোটি ঘনফুট এলএনজি মূল গ্রিডে দেওয়া হবে
  • পাইপলাইন নির্মাণের কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে।

কক্সবাজারের মহেশখালীর ভাসমান টার্মিনাল থেকে ২৫ এপ্রিল তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সরবরাহ শুরু হবে। প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মূল গ্রিডে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। এ জন্য মহেশখালীর টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণের কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
কাতার থেকে জাহাজে করে এলএনজি গ্যাস আমদানি করে তা মহেশখালীর টার্মিনাল দিয়ে পাইপলাইনে সরবরাহ করা হবে।
দেশে ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে, বিশেষ করে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলতি বছর থেকে গ্যাস দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার। বর্তমান ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায়ও এই প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। তখন তিনি বলেছিলেন, গ্যাস দেওয়ার আগে এলএনজি আমদানি করা হবে এবং তা রাখার জন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে নির্মাণ করা হবে একটি টার্মিনাল। বাজেটে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটিকে দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বা ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন অর্থমন্ত্রী।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০-এর আওতায় সরকার এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়।
রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের তিন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহেশখালীতে টার্মিনাল নির্মাণ এবং সেখান থেকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ৯১ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় সিটি গেট স্টেশন এবং আনোয়ারা থেকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পর্যন্ত ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের আরও ৩০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপনের কাজ। এসব ভৌত কাঠামোর কাজ আগামী এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে ওই কর্মকর্তারা জানান।
প্রাকৃতিক গ্যাস সাধারণ চাপ ও তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। শীতলীকরণ (রেফ্রিজারেশন) প্রযুক্তির মাধ্যমে তাপমাত্রা কমিয়ে মাইনাস ১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনলে তা তরলে পরিণত হয়। এই তরল প্রাকৃতিক গ্যাসকেই বলা হয় এলএনজি। একটি জাহাজে করে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার মিলিয়ন বা ২০০ থেকে ২৫০ কোটি ঘনফুট এলএনজি আনা সম্ভব।
দেশে গ্যাসের মজুত কমে আসায় বিকল্প হিসেবে কাতার থেকে গ্যাস আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এই গ্যাস পাইপলাইন দিয়ে মূল গ্রিডে দেওয়া হবে। এতে শিল্পকারখানায় গ্যাস–সংকট কমবে। ভবিষ্যতে সরকার আরও ১ হাজার মিলিয়ন বা ১০০ কোটি ঘনমিটার এলএনজি সরবরাহের পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানতে চাইলে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, মহেশখালীতে টার্মিনাল ও পাইপলাইন স্থাপনের কাজ এপ্রিলের মধ্যে শেষ হচ্ছে। এর পরপরই এলএনজি সরবরাহ শুরু করা হবে।
প্রতিষ্ঠানটির একজন জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক অবশ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে জানান, আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে এলএনজি সরবরাহ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে দিনক্ষণ কিছুটা পেছানোর সম্ভাবনা আছে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার পরবর্তী বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
জানা গেছে, দেশে বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২৬৯ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। এরপরও শিল্পকারখানায় গ্যাস–সংকট রয়েছে। বর্তমানে শিল্পকারখানায় প্রতি ঘনমিটার (৩৫ দশমিক ৩১৪৭ ঘনফুট) গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ৭ টাকা ৭৬ পয়সা দরে। এলএনজি আমদানি-পরবর্তী প্রতি ঘনমিটারের প্রস্তাবিত মূল্য ধরা হয়েছে ১৪ টাকা ৯০ পয়সা। এতে শিল্পপণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা দেশে উৎপাদিত প্রাকৃতিক গ্যাসের সঙ্গে এলএনজির দাম সমন্বয় করার দাবি জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, এলএনজি সরবরাহের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ইতিবাচক। এতে শিল্পকারখানায় গ্যাসের সংকট কমে আসবে। তবে সারা দেশে একই মূল্যে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। নইলে শিল্প-কারখানাগুলো প্রতিযোগিতায় টিকবে না।
এদিকে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেডের একজন ব্যবস্থাপক জানান, এলএনজি সরবরাহের সিদ্ধান্তের ফলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ২৬৫টি শিল্পকারখানাকে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে।