পড়তির মুখে চীনা স্মার্টফোনের বাজার

২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো কোনো প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারেনি চীনের স্মার্টফোনের বাজার। ছবি: এএফপি
২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো কোনো প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারেনি চীনের স্মার্টফোনের বাজার। ছবি: এএফপি
>
  • চীনের ফোনের বাজারে আধিপত্য করে মূলত স্মার্টফোন হুয়াওয়ে, অপো, ভিভো।
  • ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারেনি এই বাজার।
  • ২০১৭ সালে চীনের স্মার্টফোন ব্যবসা কমেছে ৪ শতাংশের মতো।

চীনের ফোনের বাজারে আধিপত্য করে মূলত স্মার্টফোন হুয়াওয়ে, অপো, ভিভো। ২০১৭ সালে সার্বিকভাবে বাজার কমলেও হুয়াওয়ে কিছুটা সফল ছিল। ক্যানালিসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুই অঙ্কের ঘরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে কোম্পানিটির। তবে অপো ও ভিভোর স্মার্টফোন সরবরাহ কমেছে যথাক্রমে ১৬ ও ৭ শতাংশ। ২০১৭ সালে অপো ১ কোটি ৯০ লাখ ইউনিট এবং ভিভো ১ কোটি ৭০ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন সরবরাহ করে।

কীভাবে পরিবর্তন আসে স্মার্টফোনের বাজারে?

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বের স্মার্টফোনের বাজার দখল করে রাখে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং। তবে গত দুই বছর, অর্থাৎ ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ছোট ছোট চীনা অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের ব্র্যান্ড মাথা তুলে দাঁড়াতে শুরু করে। মূলত দ্রুতগতির এন্ট্রি-লেভেল ফোন খুবই সুলভ মূল্যে দিচ্ছিল চীনা কোম্পানিগুলো। চীনের বড় বড় শহর যেমন বেইজিং ও সাংহাইয়ের মানুষ আইফোন ও গ্যালাক্সি ছাড়া ভাবতে না পারলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ দামের কারণে এসব ফোন কিনতে পারত না। আর যে কারণে এসব অঞ্চলে সাধারণ ফিচার ফোনের প্রচলনই ছিল বেশি। এমন অবস্থায় ভোক্তাদের সর্বোচ্চ প্রযুক্তির ফোন কম দামে দিতে বাজারে আসে অপো ও ভিভো। কম দামে ‘প্রিমিয়াম’ অভিজ্ঞতা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেয় তারা। ২০১৬ সাল নাগাদই তার ফল দেখা যায়। বেসিক ফোন থেকে প্রিমিয়াম স্মার্টফোনে চলে আসে বহুসংখ্যক মানুষ। এতে চীনের বাজারে ফোনের চাহিদার একটি পরিবর্তন হয়।

কাউন্টার পয়েন্ট গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের আগস্ট নাগাদ অ্যাপলের সমপরিমাণ স্মার্টফোন বিক্রি করেছে হুয়াওয়ে। ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্র্যান্ড স্যামসাংকে সিংহাসনচ্যুত করে হুয়াওয়ে।

কেন কমল চীনের স্মার্টফোনের চাহিদা?

এই প্রশ্ন এসেই যায়। ক্যানালিসের গবেষক মো. জিয়া বলছেন, চীনে স্মার্টফোন বিক্রি কমে যাওয়ার এটা কারণ হতে পারে যে ক্রেতারা ইতিমধ্যে বেসিক ফোন থেকে এন্ট্রি-লেভেল স্মার্টফোন নিয়ে ফেলেছেন। তাঁরা ভাবছেন, আপাতত তাঁদের আর প্রয়োজন নেই। গ্রাহকেরা বলছেন, তাঁদের এখন যে ফোনটি আছে, তা যথেষ্ট ভালো। আর এখন এই ফোনগুলোর আয়ুষ্কাল প্রায় ২৬ দশমিক ৮ মাস বলেও জানিয়েছে ক্যানালিস। তারা মনে করছে, ২০১৯ সালের আগে চীনের স্মার্টফোনের বাজার আর বিস্তার লাভ করবে না। ২০১৯ সালে পঞ্চম জেনারেশন (ফাইভ-জি) ডিভাইস বাজারে আসার আগ পর্যন্ত এই বাজার সম্প্রসারণ হবে না।

বাজার সম্প্রসারণের নীতি

ক্যানালিসের গবেষক মো. জিয়া বলেন, ফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো এমন সব ফোন তৈরি করছে, যার ফিচারগুলো আইফোন ও স্যামসাংয়ের ফোনের সমতুল্য। যেমন হুয়াওয়ে মেট ১০ ও হুয়াওয়ে মেট ১০ প্রোকে আইফোন ৮ ও আইফোন ৮ প্লাসের সঙ্গে তুলনা করা যায়। অথচ গ্রাহক একই ধরনের ফিচার পাচ্ছেন ৩০ শতাংশ কম দামে।

এ ছাড়া গত বছর গ্যালাক্সি নোট সেভেন কেলেঙ্কারিতে চীনের বাজারে সুনাম হারিয়েছে স্যামসাং। আর এ কারণে নতুন ফোনের প্রয়োজনে হুয়াওয়ে অপো বা ভিভোর দিকে নজর দিচ্ছেন ভোক্তা। তবে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা থাকলেও বিদেশের বাজার কিছুটা চ্যালেঞ্জিং চায়নিজ ব্র্যান্ডগুলোর জন্য। এ জন্য তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

মো. জিয়া বলেন, অপো ও ভিভো রাশিয়া ও জাপানের মতো দেশগুলোতে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চাইছে। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায়ও বাজার আরও গভীর করছে তারা। শাওমি ভালো করছে ভারত ও থাইল্যান্ডের বাজারে। সেখানে নতুন নতুন মডেলসহ নতুন স্টোর খুলছে তারা। আর হুয়াওয়ের নজর বাজেট স্মার্টফোনের দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা এই ব্র্যান্ডটির কদর না থাকলেও দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই ফোনের চাহিদা বাড়ছে।