১৪ মাসে পাঁচবার এমডি বদল

মাত্র ১৪ মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে (বিকেবি) পাঁচজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডি নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে গত ছয় মাসেই নিয়োগ পেয়েছেন চারজন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ নিয়োগ দিয়ে থাকে।

সর্বশেষ ১৩ ফেব্রুয়ারি অগ্রণী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. আলী হোসেন প্রধানিয়াকে পদোন্নতি দিয়ে বিকেবির এমডি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর এই নিয়োগের মাধ্যমে বিকেবি বহু বছর পর লম্বা সময়ের জন্য একজন এমডি পেল। কারণ, তাঁর চাকরি আছে ২০২১ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত।
বিকেবি কার্যালয়ে টাঙানো সময়কালসহ এমডিদের তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুরু থেকে আলী হোসেন প্রধানিয়া পর্যন্ত ৩৬ জনকে বিকেবির এমডি নিয়োগ দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংক তো খালি রাখা যায় না। আর, যাঁরা এমডি পদের যোগ্য হবেন, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ তাঁদের দিতেই হবে।’ তবে এবারের এমডি ভালো কিছু করার সময় পাবেন বলে তিনি আশাবাদী।

আওয়ামী লীগ সরকারের দুই মেয়াদে (২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত) বিকেবি এমডি পায় ১০ জনকে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ২৮ জানুয়ারি নিয়োগ পাওয়া মোহাম্মদ মোখতার হোসেন এমডি ছিলেন ২০১২ সালের ৪ জুলাই পর্যন্ত।

এরপর দুই বছরেরও বেশি সময় এমডি ছিলেন মো. আবদুস সালাম এবং তার পরের দুই বছর এমডি ছিলেন এম এ ইউসুফ। এম এ ইউসুফের পর এক মাসের জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন ব্যাংকের ডিএমডি মো. আবুল হোসেন।

এরপর নয় মাসের জন্য এমডি হন মুহম্মদ আউয়াল খান, যাঁকে সরিয়ে সরকার বেসিক ব্যাংকের এমডি করেন গত বছরের আগস্টে। এরপর ২০ দিনের জন্য এমডির দায়িত্ব পালন করেন ব্যাংকের ডিএমডি মাহ্তাব জাবীন এবং পরে চার মাসের জন্য এমডি হয়ে আসেন মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, যাঁর মেয়াদ শেষ হয় ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি এমডি হয়ে আসেন মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, দেড় মাসের মাথায় যিনি অবসরোত্তর ছুটিতে যান ১৪ ফেব্রুয়ারি। এরপরই নিয়োগ দেওয়া হয় বর্তমান এমডি আলী হোসেন প্রধানিয়াকে।

এদিকে একসময় বিকেবির এমডি ছিলেন এবং পরে আরও গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন, এমন লোকও কম নয়। বিকেবি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ১৯৮৬ সালে পাঁচ দিনের জন্য বিকেবির ভারপ্রাপ্ত এমডি ছিলেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ এম এম শওকত আলী তিন বছরেরও (১৯৮৬-৮৯) বেশি, আরেক উপদেষ্টা শোয়েব আহমেদ দুই বছরের (১৯৯৮-২০০০) বেশি সময় এমডি ছিলেন এই ব্যাংকে।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদাও বিকেবির এমডি ছিলেন আড়াই বছর (১৯৯২-৯৪)। বিকেবির এমডি ছিলেন পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হয়েছেন দুজন। তাঁরা হলেন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ও মুরশীদ কুলি খান।

বিকেবির সাবেক এমডিদের মধ্যে কয়েকজন অন্য ব্যাংকেও একই দায়িত্ব পালন করেন কিংবা চেয়ারম্যান হন। তাঁরা হলেন খায়রুল কবীর জনতা ব্যাংকের সাবেক এমডি, আলাউদ্দিন এ মজিদ বেসিক ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান, এস এ চৌধুরী সোনালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান, আবদুস সালাম জনতা ব্যাংকের সাবেক এমডি, এ কে এম সাজেদুর রহমান বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রমুখ।

ব্যাংকাররা বলেছেন, কেউ পদোন্নতির যোগ্য হলে সরকার প্রথমেই বিকেবির কথা ভাবে। সেটা তিন দিন হোক আর তিন মাসই হোক না কেন। এতে তাঁরা ব্যাংকের উন্নয়ন নিয়ে কিছু চিন্তা করার সুযোগই পান না।

তবে বিকেবির বড় সমস্যা তহবিল ব্যয় (কস্ট অব ফান্ড)। মোখতার হোসেনের সময় বিপুল অঙ্কের বাণিজ্যিক ঋণ দিয়েছিল এ ব্যাংক, যার ফল ভালো হয়নি। ব্যাংকটিতে সিবিএরও দৌরাত্ম্য চলছে। ২০১৬ সালের ৩০ জুন প্রকাশিত নিরীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, ব্যাংকটির তহবিল খরচ ১০ শতাংশেরও বেশি। একই প্রতিবেদন অনুযায়ী বিকেবির মূলধন ঘাটতি দাঁড়ায় ৭ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা এবং ওই সময় পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ২৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ, যার পরিমাণ ৪ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা।

নতুন এমডি আলী হোসেন প্রধানিয়া প্রথম আলোকে বলেন, চাকরির মেয়াদ অনেক দিন থাকায় তিনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা নিয়ে বিকেবির কিছু সংস্কারকাজের পাশাপাশি খেলাপি ঋণ আদায়ে মনোযোগ দেবেন।