বিদেশি কলে খরচ ৫ গুণ বেশি

  • বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কলের সর্বনিম্ন টার্মিনেশন মূল্য কার্যকর আছে ১ টাকা ৬০ পয়সা
  • ভারতের কলরেটের তুলনায় বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কলের টার্মিনেশন মূল্য ৫ গুণের বেশি

বিদেশ থেকে আসা আন্তর্জাতিক কলের মূল্য আরেক দফা কমিয়েছে ভারত। দেশটিতে এত দিন আন্তর্জাতিক কলের টার্মিনেশন মূল্য ছিল স্থানীয় মুদ্রায় ৫৩ পয়সা, যা ১ ফেব্রুয়ারি কমে ৩০ পয়সা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কলের সর্বনিম্ন টার্মিনেশন মূল্য কার্যকর আছে ১ টাকা ৬০ পয়সা। অর্থাৎ ভারতের কলরেটের তুলনায় বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কলের টার্মিনেশন মূল্য ৫ গুণের বেশি।

কল টার্মিনেশন রেট হচ্ছে একটি দেশ থেকে আরেকটি দেশে কল করা হলে তা গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছানোর খরচ। যেমন সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে কেউ যদি ফোন করেন, তাহলে তা প্রথমে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক গেটওয়ে অপারেটরের (আইজিডব্লিউ) কাছে আসে। এরপর তা আইসিএক্স (ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ) হয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে যায়। এ জন্য বাংলাদেশের আইজিডব্লিউ সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট অপারেটরের কাছে একটি মূল্য নেয়। এই মূল্যকেই বলা হয় কল টার্মিনেশন রেট। আইজিডব্লিউ অপারেটরের এই আয় আবার সরকার, মোবাইল ফোন অপারেটর ও আইসিএক্সের মধ্যে ভাগাভাগি হয়।

ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া (টিআরএআই) মূলত বৈধ পথে কলসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করেই কলরেট কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
টিআরএআইয়ের হিসাবে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ভারতে বৈধ পথে আসা কলের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৭৪০ কোটি মিনিট, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ৯ হাজার ২৪০ কোটি মিনিট। যদিও ভারতের আইজিডব্লিউ ও মোবাইল ফোন অপারেটরদের দাবি ছিল, আন্তর্জাতিক কলরেটের দাম ৫৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ রুপি নির্ধারণের। কিন্তু উল্টো তা কমিয়ে এখন ৩০ পয়সা করা হয়েছে।

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কলের সর্বনিম্ন টার্মিনেশন রেট নির্ধারিত রয়েছে দেড় সেন্ট বা ১ টাকা ২০ পয়সা। যদিও এ মূল্যে কল আসে না। এ ধরনের কল আনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারিত আছে সাড়ে তিন সেন্ট বা ২ টাকা ৮০ পয়সা। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে পরীক্ষামূলকভাবে এই কলরেট নির্ধারণ করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এরপর চার বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও আন্তর্জাতিক কলরেটের সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।

এদিকে, যে মূল্যে বিদেশ থেকে দেশে কল আসছে, সেই মূল্যে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আয় ভাগাভাগি করছে না আইজিডব্লিউ অপারেটররা। বিদেশ থেকে আইজিডব্লিউ অপারেটররা কল আনে ১ টাকা ৬০ পয়সায়, অথচ আয় ভাগাভাগি হয় ১ টাকা ২০ পয়সার সর্বনিম্ন দর ধরে। নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশ থেকে আসা প্রতি এক মিনিট কল থেকে যে আয় হয়, তার ৪০ শতাংশ বিটিআরসি, ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ আইসিএক্স, ২২ দশমিক ৫ শতাংশ মোবাইল অপারেটর আর বাকি ২০ শতাংশ আইজিডব্লিউ কোম্পানিগুলো পেয়ে থাকে।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক কলরেট যখন ১ টাকা ২০ পয়সা ছিল, তখনো বৈধ পথে আসা দৈনিক কলের সংখ্যা ছিল ১১ কোটি মিনিট। কিন্তু কলের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়ার পর থেকেই কমতে শুরু করে কলসংখ্যা। বর্তমানে দৈনিক আন্তর্জাতিক কলসংখ্যা ৬ কোটির নিচে চলে এসেছে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, গত তিন বছরে দেশে আন্তর্জাতিক কলসংখ্যা প্রায় অর্ধেক কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ কলরেট বৃদ্ধি। কলরেট কম থাকলে অবৈধ ভিওআইপি কলের সংখ্যা কমে যায়।

বৈধ পথে আন্তর্জাতিক কলসংখ্যা ও সরকারের আয় বাড়াতে গত বছরের এপ্রিলে টিএআরএআইয়ের মতো বিটিআরসিও কয়েকটি প্রস্তাব তৈরি করেছিল। এসব প্রস্তাবের একটি ছিল বিদেশ থেকে কল আনার সর্বোচ্চ মূল্য ২ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমিয়ে ১ টাকা ২৮ পয়সায় নামিয়ে আনা। আবার যে মূল্যে কল আসবে, সেই অনুপাতেই সরকারসহ অন্য পক্ষের সঙ্গে আয় ভাগাভাগি করা। আইজিডব্লিউসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এর কোনোটিই এখন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি।

জানতে চাইলে টেলিযোগাযোগবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার জ্যেষ্ঠ গবেষক আবু সাইদ খান প্রথম আলোকে বলেন, একটি বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কলরেট কমিয়ে আনার এ সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য নৈতিক শক্তি বিটিআরসির নেই, যা টিআরএআইয়ের আছে।