ভারতীয় অংশে বন্দরের অবস্থা যা-তা

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর।  ফাইল ছবি
যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর। ফাইল ছবি
>
  • ২২টি স্থলবন্দরের অপর প্রান্তে ভারতের ১৮টি শুল্ক স্টেশনের অবস্থা খারাপ।
  • ভারতীয় অংশে কাঁচা বা সেমিপাকা ঘরেই শুল্কায়ন কার্যক্রম চলে।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হলো ভারত। ভারত থেকেই আমদানি বেশি হয়। এই আমদানির প্রায় ৮০ শতাংশ চালানই আসে স্থলপথে। মূলত দেশের বড় বড় স্থলবন্দর দিয়ে হরেক পণ্যের চালান এ দেশে প্রবেশ করে। বাংলাদেশের এসব স্থলবন্দরের অপর অংশের ভারতীয় শুল্ক স্টেশনগুলোর অবস্থা বেশ নাজুক। কোনো কোনো স্থলবন্দরের অবকাঠামো বলতে কিছু নেই। চালা ঘর বা কাঁচা বেড়ার ঘরে বসেই শুল্কায়নের কাজ চলে। শুল্ক স্টেশন পর্যন্ত যাওয়ার সড়কও ভাঙাচোরা। অন্যদিকে বাংলাদেশের স্থলবন্দরগুলোর অবস্থা তুলনামূলক অনেক ভালো। বেশির ভাগ স্থলবন্দরেই অবকাঠামো আছে।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ দুই দেশের স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনগুলোর বাস্তব চিত্র তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছে। সরেজমিনে ঘুরে এসে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনও তৈরি করেছেন। ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বাংলাদেশে ২২টি স্থলবন্দর আছে। এই স্থলবন্দরগুলোর বিপরীত অংশে ভারতীয় শুল্ক স্টেশন আছে। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনের তুলনামূলক ওই চিত্রে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ২২টি স্থলবন্দরের অপর অংশে ভারতীয় ১৮টি স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনের অবকাঠামো বেশ দুর্বল। কয়েকটিতে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন ভবন থাকলেও ওজন সেতু, গুদামঘরসহ অন্যান্য ন্যূনতম আধুনিক সুবিধা নেই। রাস্তাঘাটও ভালো নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে তাদের শুল্ক স্টেশনগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এসব শুল্ক স্টেশনের অবকাঠামো হলে বাণিজ্য আরও সহজ হবে। তিনি আরও বলেন, সাধারণত যে দেশ বেশি আমদানি করে, সেই দেশের স্থলবন্দর বা শুল্ক স্টেশনে আধুনিক অবকাঠামো প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে ওজন সেতু, গুদাম, পণ্য মাপার যন্ত্র ইত্যাদি প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ আমদানি বেশি করে। তাই ভারতের সীমান্তে পণ্যবাহী ট্রাককে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয় না, সরাসরি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তাই শুল্ক স্টেশনের অবকাঠামো উন্নয়নে ভারতের আগ্রহ কম থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, তুলনামূলক ভালো অবকাঠামো আছে যশোরের বেনাপোলের অপর অংশে পেট্রাপোল, পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধার অপর অংশ ফুলবাড়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার বিপরীতে আগরতলা এবং সিলেটের শেওলার অপর অংশে সুতারকান্দি শুল্ক স্টেশনে।

কোথায় খারাপ অবস্থা

ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি হয়ে বাংলাদেশের দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পণ্যের ট্রাক আসে। বাংলাদেশের অংশে তিনটি গুদামঘর, পার্কিং ইয়ার্ড, ওজনযন্ত্র—এসব থাকলেও ভারতীয় অংশে কোনো অবকাঠামো নেই। ভারতের প্রায় দুই কিলোমিটার সরু রাস্তা পার হয়ে সীমান্তে আসতে হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদের বিপরীতে ভারতের মালদার মাহাদীপুর শুল্ক স্টেশন। এই শুল্ক স্টেশনের তেমন কোনো অবকাঠামো নেই। কোনো গোডাউন নেই। মাহাদীপুর থেকে ভারতের মহাসড়ক পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা বেশ নাজুক।

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা স্থলবন্দরের ভারতের গেদে শুল্ক স্টেশন দিয়ে রেলপথে আমদানি-রপ্তানি হয়। কিন্তু শুল্ক স্টেশন শুধু নামেই। কোনো অবকাঠামো নেই।

দেশের অন্যতম ব্যস্ত স্থলবন্দর হলো লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর। গোডাউন, পণ্য খালাসের ইয়ার্ড, ওজনযন্ত্রসহ সবই আছে। কিন্তু ভারতের মেখলীগঞ্জের চেংড়াবান্ধা শুল্কস্টেশনে সেমিপাকা ভবনেই শুল্কায়ন ও অভিবাসন কার্যক্রম চলে।

বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের দৌলতগঞ্জকে স্থলবন্দর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এখন অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। কিন্তু ভারতীয় অংশে নদীয়ার মাঝদিয়ায় শুল্ক স্টেশনই নেই।

বাংলাদেশের ভোমরা স্থলবন্দরের বিপরীতে আছে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার গোজাডাঙ্গা। সেখানে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন ভবন থাকলেও অন্য কোনো অবকাঠামো নেই। একইভাবে বাংলাদেশের বিপরীতে ভারতীয় অংশের অন্য শুল্ক স্টেশনগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। বেশির ভাগেরই শুধু কাস্টমস কার্যালয় আছে, অন্য কোনো অবকাঠামো নেই। বাংলাদেশের স্থলবন্দরগুলোর কিছু অবকাঠামো আছে এবং নতুন করে অবকাঠামো উন্নয়ন চলছে।

ভারতের যেসব শুল্কস্টেশনের তেমন অবকাঠামো নেই, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নীলফামারীর চিলাহাটির ভারতীয় অংশের কোচবিহারের হলদীবাড়ি, ফেনীর বিলোনিয়ার বিপরীতে ত্রিপুরার বিলোনিয়া, খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দরের ভারতের সাবরুম, কুমিল্লার বিবিরবাজারের অপর অংশ ত্রিপুরার সোনামুড়ার শ্রীমন্তপুর, হবিগঞ্জের বাল্লা স্থলবন্দরের বিপরীতে ত্রিপুরার পাহাড়মুড়া, শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দরের অপর অংশ মেঘালয়ের ডালু, সিলেটের তামাবিলের অপর অংশ শিলংয়ের ডাউকি। দুই দেশের  বৈঠকে স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়।