এলডিসি উত্তর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৌশল প্রণয়নের তাগিদ

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা। গুলশান, ঢাকা, ১০ মার্চ। ছবি: প্রথম আলো
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা। গুলশান, ঢাকা, ১০ মার্চ। ছবি: প্রথম আলো

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার পর্যায়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি কৌশল প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এলডিসি থেকে বের হলে উচ্চ সুদে ঋণ নিতে হবে। আবার বাণিজ্যসুবিধা কমে গেলে তা পুষিয়ে নিতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিতে হবে। তাঁর মতে, বাংলাদেশ যখন এলডিসি থেকে বের হচ্ছে, তখন বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিবেশ অনুকূলে নয়। তাই একটি উত্তরণকালীন কৌশল ঠিক করা উচিত।

আজ শনিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ’ শীর্ষক সংলাপে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথা বলেন।

সংলাপে বক্তারা বলেন, এলডিসি থেকে বের বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশ হলে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বাংলাদেশ। স্বল্প সুদের যেমন ঋণ পাওয়া যাবে না, তেমনি এলডিসি হিসেবে প্রাপ্ত বাণিজ্যসুবিধাও কমে যাবে।

চলতি মার্চ মাসেই জাতিসংঘের কমিটি ফল ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় এলডিসি থেকে বের হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে নানা আনুষ্ঠানিক শেষ করে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
গুলশানের একটি হোটেলে সিপিডির এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ‘উত্তরণ নমুনা: ধারণা ও তুলনা’ শীর্ষক প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান।

রেহমান সোবহান তাঁর বক্তব্যে বলেন, এই পর্যন্ত যতগুলো দেশ এলডিসি থেকে ছোট দ্বীপদেশগুলো শুধু সংখ্যার অর্জন দিয়ে উত্তরণ হয়েছে। কিন্তু উত্তরণ কতটা টেকসই হলো, সেটাই মূল বিষয়। অনেক দেশ এলডিসি থেকে বের হয়ে সমস্যায় পড়েছে।

‘উত্তরণ নমুনা: ধারণা ও তুলনা’ শীর্ষক প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। গুলশান, ঢাকা, ১০ মার্চ। ছবি: প্রথম আলো
‘উত্তরণ নমুনা: ধারণা ও তুলনা’ শীর্ষক প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। গুলশান, ঢাকা, ১০ মার্চ। ছবি: প্রথম আলো

উদাহরণ দিয়ে রেহমান সোবহান বলেন, যেসব দেশ এলডিসি থেকে বের হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে একটি দেশও পাওয়া যাবে না, যাদের উদ্যোক্তা শ্রেণি আছে এবং একটি সক্রিয় শ্রমশক্তি আছে। যেমন মালদ্বীপ শুধু পর্যটননির্ভর অর্থনীতির দেশ।
প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেন, আমরা এত ভালো করছি, তবু বৈষম্য বাড়ছে। দারিদ্র্য বিমোচনে আমরা অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছি, তবু পুরোপুরি দারিদ্র্য বিমোচন করতে পারছি না।
দিনের দ্বিতীয় সেশনে ‘উত্তরণের পথ ও আরও কিছু প্রসঙ্গ’ শীর্ষক এই অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান ও গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

এই অধিবেশনের সভাপতি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মাত্র একটি পণ্য থেকে ৮০ শতাংশ রপ্তানি আয় হয়। রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে।

পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক বলেন, ‘আমরা এমন একসময়ে এলডিসি থেকে উত্তরণ হতে যাচ্ছি, যখন অনিশ্চয়তা আছে।’

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, এলডিসি থেকে বের হয়ে গেলে রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি ডলারের আঘাত পড়বে।
সিপিডির মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর মূল প্রবন্ধে বলেন, এলডিসি থেকে বের হয়ে গেলে বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনায় বাজারসুবিধা হারাবে বাংলাদেশ।
এ ছাড়া বিভিন্ন অধিবেশনে বক্তব্য দেন ইউএনডিপির আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত চারলোটা স্কালাইটার প্রমুখ।