অভিযান শুরুর আগেই বাজারের নাম ফাঁস

.
.

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অভিযান শুরুর আগে বাজারের নাম ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। এই অভিযোগ উঠে এসেছে বাজার তদারকি জোরদার করা নিয়ে আয়োজিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সভায়। সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব বলেন, আগে বাজারে অভিযানের দিন রিজার্ভ পুলিশের সদস্যদের পাওয়া যেত। এখন সংশ্লিষ্ট থানা থেকে সদস্যদের নিয়ে অভিযান পরিচালনা করতে হয়। এতে বাজারের নাম আগেই প্রকাশ হয়ে যায়।

বৈঠকে আগের মতো রিজার্ভ পুলিশ সদস্যদের নিয়ে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য পুলিশ সদস্যদের মোতায়েনের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে (ডিএমপি) অনুরোধ জানানো হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অভিযানের আগে বাজারের নাম ফাঁস হয়ে গেলে তদারকিতে কোনো লাভ হয় না। ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই সতর্ক হয়ে যান। অনেক সময় দেখা যায়, ভ্রাম্যমাণ আদালত যাওয়ার পরই বেশির ভাগ দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সভায় বাজার তদারকির ক্ষেত্রে নানা দুর্বলতা উঠে আসে। সভায় এখন থেকে বাজারে অভিযানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সমিতিকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভার কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাজার তদারকি দলের কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্য নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হয় গত ২৩ জানুয়ারি। এতে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্যসচিব শুভাশীষ বসু। সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পবিত্র রমজান মাসসহ বিভিন্ন সময়ে বাজারে তদারকি দল পাঠিয়ে থাকে। এসব তদারকি দল নানা অভিযোগে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করে। অবশ্য ধারাবাহিকভাবে না করে মাঝে মাঝে এসব ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় বিশেষ কোনো সুফল পাওয়া যায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যসচিব গোলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে যেসব অভিযান পরিচালনা করা হয়, তা ধারাবাহিক নয়। আবার একাধিক সংস্থা অভিযান চালায়, তাদের মধ্যে সমন্বয় থাকে না। সমন্বয় করে ধারাবাহিক অভিযান চালানো হলে এর সুফল পাওয়া যেত। তিনি বলেন, অভিযানের আগে বাজারের নাম ফাঁস হওয়া উচিত নয়। অভিযান আকস্মিক হওয়া উচিত।

সভায় কর্মকর্তাদের আলোচনায় উঠে আসে, অভিযানের দিন তদারকি দলের সদস্যরা যথাসময়ে উপস্থিত হন না। এ কারণে অভিযান শুরু করতে দেরি হয়। তা ছাড়া অভিযানের দলনেতা অনেক ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করেন না। এতে অভিযান সম্পর্কে মতামত ও সমস্যা সমাধানে সুপারিশ থাকে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব অভিযোগ করেন, বাজারে ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধের জন্য প্রবেশ করা যায় না। তিনি সিটি করপোরেশনকে বাজারগুলো পরিচ্ছন্ন করার তাগিদ দেন।

পাইকারি বাজারে পণ্যের আমদানি ও বিক্রয়মূল্য পর্যবেক্ষণ, প্রতিদিন পরিদর্শন শেষে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল ও পর্যবেক্ষণ দলের সবাইকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত হয় সভায়। এতে বাজারে সিটি করপোরেশনের পণ্যমূল্যের তালিকা চক দিয়ে বোর্ডে না লিখে ডিজিটাল বোর্ড স্থাপন করা যায় কি না, তা যাচাই করে দেখার অনুরোধ করা হয় সিটি করপোরেশনকে।

সভায় বাণিজ্যসচিব বলেন, বাজার পর্যবেক্ষণে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য জরিমানা নয়, ব্যবসায়ীদের নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি উৎসাহিত করতে হবে। তিনি বাজার পর্যবেক্ষণ দলকে পাইকারি ও খুচরা মূল্য যাচাই করে দেখা, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরবরাহ ঠিক রাখার পরামর্শ দেন।