চাষির পাটের আনন্দ পাটে যেতে বসেছে

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

মেহেরপুরে এবার পাটের ভালো ফলন হলেও আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন চাষি ও বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। চাষিদের অভিযোগ, সরকার-নির্ধারিত দামে পাট কিনছেন না ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ক্রেতা না থাকায় কম দামে বিক্রি করছেন মজুত থাকা পাট। এভাবে পাটের ফলনে চাষিদের খুশি এখন পাটে যেতে বসেছে।

গাংনী উপজেলার পাট ব্যবসায়ী নুরুল হুদা। প্রতিবছর সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে পাট কিনে গুদামজাত করেন। এ বছরও পাট কিনে গুদামে ভরেছেন। এমনকি এখনো ২০১৬ সালের পাট তাঁর গুদামে মজুত আছে। আশা করেছিলেন, চলতি বছর সব লোকসান পুষিয়ে উঠবেন। কিন্তু সে গুড়ে বালি। এমনিতে বাজারে পাট কেনার ক্রেতা নেই, তার ওপর যে পাট ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ ছিল, এখন তা বেচতে হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকা দরে। পাট বিক্রি করে যা পাবেন, তা ব্যাংকের দেনা মেটাতেই শেষ হয়ে যাবে। মূলধন থাকবে না।

এমনই আরেক পাট ব্যবসায়ী রফিকউজ্জামান। সদর উপজেলায় ব্যবসা করেন। তিনি জানান, সরকারি ক্রয়কেন্দ্র ও রপ্তানিকারকেরা নিয়মিত পাট কিনছে না। কাঁচা পাট বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে না। রপ্তানি হয় পাটজাত পণ্য। তাঁর গুদামে ছয় হাজার মণ পাট মজুত রয়েছে। কয়েক দিন হলো তিনি পাট বিক্রি শুরু করেছেন। পাটের দাম আর বাড়বে না। সে কারণে লোকসান হলেও তাঁকে পাট বিক্রি করতে হচ্ছে।

মেহেরপুরের ১৭ জন পাট ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যমতে, প্রায় দুই লাখ মণেরও বেশি পাট জেলার ব্যবসায়ীদের গুদামে মজুত রয়েছে। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৬৭৮ হেক্টর জমিতে ১৫ লাখ ১১ হাজার ২২১ মেট্রিক টন পাট উৎপাদন হয়েছিল। শুধু মেহেরপুর জেলায় পাট উৎপাদন হয় ৭৭ হাজার ৫৩৫ মেট্রিক টন।

এদিকে পাট ব্যবসায়ীদের দিকে অভিযোগ তুলছেন পাটচাষিরা। সদর উপজেলার শোভরাজপুর গ্রামের পাটচাষি মফিজুল শেখ জমির পাট বিক্রি করতে পারেননি। কারণ বাজার মন্দা। তাঁর ঘরে এখন ২৫০ মণ পাট রয়েছে। তাঁর মতো আরও অনেক চাষি রয়েছেন, যাঁরা বিক্রি করতে না পারায় তাঁদের জমির পাট নিজেদের ঘরে মজুত রেখেছেন।

মেহেরপুর সদর উপজেলার বামনপাড়া, কোর্ট রোড ঘুরে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় এবার পাটের দাম মণপ্রতি ৪০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা কম। এ বছর সরকার উন্নত মানের পাট মণপ্রতি ১ হাজার ৪০০ ও নিম্নমানের পাট মণপ্রতি ১ হাজার ১০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। চাষিরা অভিযোগ করেন, ব্যবসায়ীরা ভালো মানের পাটই কিনছেন মণপ্রতি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা দরে। আর অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের পাটের প্রতি কোনো ব্যবসায়ীই আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

কৃষকেরা জানান, বিদ্যুৎ, ডিজেল ও সারের দাম বাড়ায় অনেক কৃষকই বোরো ধান চাষ না করে তুলনামূলক সাশ্রয়ী পাট চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। কিন্তু পাটের বাজার খারাপ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। এসব কৃষক জানান, চাষে খরচ কম হলেও পাট কাটা, আঁশ পচানো এবং রোদে শুকানো পর্যন্ত অনেক পরিশ্রম। তা ছাড়া এখানে কাজ করা একজন দিনমজুরকে প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে মজুরি দিতে হয়। এত খরচের পর এই বাজারমূল্য মেনে নেওয়া যায় না বলে জানান তাঁরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেরপুরের স্টার জুট মিলের সহব্যবস্থাপক মো. ইব্রাহীম বলেন, গত বছরে কৃষক পর্যায়ে পাট ক্রয় করা হয়েছিল। তাঁদের সময়মতো টাকা পরিশোধ করতে না পারায় এ বছর পাট কেনা সম্ভব হচ্ছে না।