বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা কী?

সিদ্দিকুর রহমান সভাপতি, বিজিএমইএ
সিদ্দিকুর রহমান সভাপতি, বিজিএমইএ
• অনেক ব্যাংকের অবস্থাই খারাপ: বিজিএমইএর সভাপতি।
• ব্যাংক খাত নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনার অনুরোধ।
• ব্যাংক খাতকে কঠোর আইনের আওতায় নেওয়ার অনুরোধ।


দেশের ব্যাংকিং খাতের অবস্থা বর্তমানে ভালো নয় বলে মন্তব্য করেছেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান। একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, তারল্যঘাটতি দূর করতে ব্যাংককে অর্থ দিলে দুর্নীতিকেই উৎসাহ দেওয়া হবে।


বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘ব্যাংক খাতের অবস্থা বর্তমানে ভালো নয়। আমরা ব্যবসা করি, নিজেরাও বুঝি। অনেক ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ হয়। আমরা জানি, অনেক ব্যাংকের অবস্থাই খারাপ।’ ব্যাংক খাত নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা করতে অনুরোধ করেন তিনি।

বেসরকারি ব্যাংকের তারল্যসংকট মোকাবিলায় সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগের বিষয়ে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘একটি ব্যাংক থেকে দুর্নীতি করে ৬০০ কোটি টাকা নিয়ে গেল। সেই ব্যাংককে আবার ৬০০ কোটি টাকা দেওয়ার অর্থ হচ্ছে আরও ১০টি ব্যাংক দুর্নীতি করতে উৎসাহিত হবে। এটি কোনো অবস্থাতেই উচিত নয়। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা কী? আমি যদি আজকে চুরি করি, তাহলে আবার ১০০ কোটি টাকা দেবেন সেই চুরিকে জায়েজ করার জন্য! সেসব ব্যাংককে অর্থ না দিয়ে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ করে দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে ব্যাংকের পরিচালকদের বাদ দিয়ে দেন।’

রাজধানীর বিজিএমইএ ভবনের নুরুল কাদের মিলনায়তনে গতকাল সোমবার ‘বিজিএমইএ-বিইউএফটি জার্নালিজম ফেলোশিপ’ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।

ব্যাংকিং খাতে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে এক ব্যাংকের পর আরেক ব্যাংক অনিয়ম করবে বলে মন্তব্য করেন বিজিএমইএর সভাপতি। তিনি বলেন, ‘ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। এখনই ব্যাংক খাতকে আরও (কঠোর) আইনের আওতায় নেওয়ার অনুরোধ করছি।’

ব্যাংকঋণের সুদের হার বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে বলতে বলতে ব্যাংকঋণের সুদের হার এক অঙ্কের ঘরে এল। কিন্তু তিন মাস, ছয় মাস না যেতেই আবার সুদের হার বেড়ে গেল। ব্যাংকের কোনো লোককে সুদের হার বৃদ্ধির কারণ জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বলেন, আমানতের সুদের হার সাড়ে ১০ শতাংশের নিচে হলে টাকা পাই না। মানুষের হাতে যদি টাকা থাকে, তাহলে ৬ বা ৭ শতাংশ সুদে কেন টাকা রাখবে না? তারা কি বালিশের নিচে টাকা নিয়ে ঘুমাবে? আসলে এগুলো হলো অসুস্থ প্রতিযোগিতার ফল।’

ব্যাংকিং খাতের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের নৈতিকতা নিয়েও কথা বলেন বিজিএমইএর সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কিছু ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে যান। যেমন কয়েক দিন আগে হঠাৎ করে রডের দাম ৪০-৪৫ শতাংশ বেড়ে গেল। কী এমন পরিবর্তন হলো যে ৪৫ হাজার টাকার এক টন রডের দাম ৭২ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকা হয়ে গেল। এই দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।’

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘কারণে-অকারণে বিভিন্ন সময় আমরা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিই। দেখবেন এই যে রোজা আসছে, জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো শুরু হয়ে যাবে। কেন এগুলো আমরা করি? আমাদেরও তো একটা দায়িত্ব আছে, আমরাও এ দেশের মানুষ।’

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘অনৈতিকভাবে পয়সা রোজগার করতে হবে কেন? যারা এগুলো করে, তাদের কিন্তু খাওয়ার জন্য পয়সার প্রয়োজন নেই। তাদের পয়সার জন্য পয়সা প্রয়োজন। আমি সবাইকে বলব, আমরা ব্যবসায়ী, আমরা সবাই বন্ধু। একজন ব্যবসায়ীর জন্য আরেকজন ব্যবসায়ী যেন বদনামের ভাগীদার না হই, সেই চেষ্টা আমাদের সবার করা উচিত। নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা করে আপনি হাজার কোটি টাকা আয় করেন, কেউ কিছু বলবে না।’

বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘প্রথম জীবনে মানুষ যখন কোনো কিছু শুরু করে, তখন হয়তো একটু-আধটু অনৈতিক কিছু থাকে। তারপর ধীরে ধীরে তা শোধরাতে হয়। তবে এখনো কিছু লোক শোধরায়নি। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কাছে অনুরোধ করছি, যারা অনৈতিক কাজ করে, তাদের আইনের আওতায় আনুন।’

বিজিএমইএর সভাপতির বক্তব্যের পরে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন বক্তব্য দিলেও ব্যাংক খাত নিয়ে কোনো কথা বলেননি। লিখিত বক্তব্যে মন্ত্রী পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পোশাকশিল্পের ধারাবাহিক উন্নতির জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইটিভির প্রধান নির্বাহী ও প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল, ভোরের কাগজ-এর সম্পাদক শ্যামল দত্ত, গাজী মিডিয়া গ্রুপের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, বিজিএমইএর সহসভাপতি মঈনউদ্দিন আহমেদ, ফারুক হাসান, মোহাম্মদ নাছির, বিইউএফটির উপাচার্য নিজামুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

এবারের বিজিএমইএ ও বিইউএফটি জার্নালিজম ফেলোশিপ পেয়েছেন দৈনিক সমকাল-এর আবু হেনা মুহিব, এনটিভির মো. হাসানুল আলম, একাত্তর টিভির কাবেরী মৈত্রেয়ী, ডেইলি সান-এর জসিম উদ্দিন, দৈনিক মানবকণ্ঠ-এর মফিজুল ইসলাম চৌধুরী ও দৈনিক কালের কণ্ঠ-এর রাশেদুল তুষার। তাঁদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকার চেক তুলে দেন শিল্পমন্ত্রী ও বিজিএমইএর সভাপতি।