চীনও শুল্ক আরোপ করল

ডোনাল্ড ট্রাম্প, সি চিন পিং
ডোনাল্ড ট্রাম্প, সি চিন পিং

চীনও পিছিয়ে থাকল না। তাদের হুমকি এখন বাস্তবে পরিণত হলো। যুক্তরাষ্ট্র চীনের ৬০ বিলিয়ন ডলারের পণ্যে আমদানি শুল্ক আরোপে চীন ঘোষণা দিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তারা যে তিন বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে, তার ওপর শুল্ক আরোপ করা হবে। সেই ঘোষণা তারা দিয়েছে এবং আগামী সোমবার থেকে তা কার্যকর হতে যাচ্ছে। এতে ১২৮টি মার্কিন রপ্তানি পণ্যে শুল্ক বসবে, যার মধ্যে আছে শূকরের মাংস থেকে শুরু করে ইস্পাতের পাইপ পর্যন্ত।

বেইজিং বলেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনসহ আরও কটি দেশের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ট্রাম্প যে শুল্ক আরোপ করেছেন, তার জবাবেই চীন পাল্টা শুল্ক আরোপ করল। বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরির অভিযোগে ট্রাম্প এসব চীনা পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র কোন কোন চীনা পণ্যে এই শুল্ক আরোপ করবে তা এখনো ঠিক করেনি। এখন পর্যন্ত চীন ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে শুল্ক আরোপের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছে।

চীনের বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয় রোববার বিবৃতিতে বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ১২০ পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে। এর মধ্যে শূকরের মাংস থেকে পুনর্ব্যবহারের উপযোগী অ্যালুমিনিয়ামও আছে। তবে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণের বিবেচনায় এটা খুবই নগণ্য। কিন্তু আক্রান্ত শিল্পের জন্য শুল্ক ভয়ংকর ব্যাপার।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল পোর্ক প্রোডিউসারস কাউন্সিল সতর্ক করে দিয়েছে, এই শুল্কের কারণে ‘গ্রামীণ যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’ গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের শূকরের মাংস চীনে রপ্তানি হয়েছে। চীন এখন মার্কিন শূকরের মাংসের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বাজার।

চীন এ কারণে বিচলিত যে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় স্বার্থের কথা বলে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে শুল্ক আরোপ করেছে। বেইজিংয়ের ভাষ্য হলো, এটা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতির লঙ্ঘন। প্রথমবার ধাতুর ওপর শুল্ক আরোপের সময় হোয়াইট হাউস বলেছিল, কানাডা, মেক্সিকো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো মিত্র দেশগুলোকে ছাড় দেওয়া হবে।
রোববারের বিবৃতিতে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, এই ছাড় দেওয়ার ব্যাপারটা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আইনের ‘গুরুতর লঙ্ঘন’। সংস্থাটির আইনে বলা হয়েছে, সদস্যদের মধ্যে বৈষম্য করা যাবে না। চীন বলেছে, তারা আশা করছে, যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত এই শুল্ক প্রত্যাহার করবে এবং ‘দুই দেশের বাণিজ্য স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে।’

চীন বারবার বলেছে, তারা বাণিজ্যযুদ্ধ চায় না। কিন্তু তারা এই সতর্কবাণীও দিয়েছে যে নিজ স্বার্থ রক্ষায় তারা ‘কঠিন ও প্রয়োজনীয়’ পদক্ষেপ নেবে। চীনের সরকারি সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার এক মতামত কলামে বলা হয়েছে, ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে যে আরও পদক্ষেপ নিতে চান তা বাস্তবে ‘আত্মবিনাশী জুয়ার’ শামিল। এতে মার্কিন অর্থনীতির স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে।

ট্রাম্প বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন, বেইজিং অন্যায্য বাণিজ্যিক চর্চার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাকরি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি পণ্য বাণিজ্যে চীনের সঙ্গে বিপুল ঘাটতি কমিয়ে আনতে চান, গত বছর যা দাঁড়ায় ৩৭৫ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু অর্থনীতিবেদরা সতর্ক করে দিয়েছেন, শুল্ক আরোপ করে এই লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না। বরং এতে অর্থনীতির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শীর্ষ কর্তারা উত্তেজনা কমাতে বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু কোনো পক্ষই ছাড় দিতে রাজি নয়। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, মার্কিন প্রশাসন চীনা পণ্যের তালিকা প্রকাশ করলে চীন আরও প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেবে। অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা গ্যাভক্যালের প্রতিষ্ঠাতা অংশীদার আরথার ক্রোয়েবার ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, পরবর্তী ধাপে চীন হয়তো মার্কিন কৃষিপণ্যে শুল্ক আরোপ করবে।

তিনি আরও বলেন, চীনের মনোভাবটা এমন যে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সটান হয়ে দাঁড়াবে ঠিকই কিন্তু বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটাবে না। ‘চীন বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ভালো মানুষ হতে চায়। ট্রাম্পের বেআইনি আক্রমণের বিরুদ্ধে তারা খেলার নিয়মগুলো টিকিয়ে রাখতে চায়।’