তিতাসের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ ব্যবসায়ীদের

প্রধানমন্ত্রীর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রীর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। প্রথম আলো ফাইল ছবি

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার নেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।

প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেছেন, ‘তিতাসের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেটি প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা ব্যক্তিগতভাবে হতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করতে গেল আলাদা মার্কেটিং (বিপণন) কোম্পানি খুলব। তারা গ্যাস বিক্রি করবে। তারা যদি তিতাসের পাইপ ব্যবহার করে, তাহলে একটা চার্জ দেবে।’ তিনি বলেন, ‘যারা পথে আসবে না, তাদের সতর্ক করছি, গ্রাহকদের অত্যাচার বা হয়রানি করলে সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে দেব। অবশ্যই মার্কেটিং কোম্পানি করব।’

রাজধানীর পান্থপথে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিটিএমএ) কার্যালয়ে আজ মঙ্গলবার বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এসব কথা বলেন। এর আগে তিতাসের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা হয়রানির অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিটিএমএর সভাপতি তপন চৌধুরী।

বিটিএমএর সাবেক সভাপতি মতিন চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গ্যাস-সংযোগ পেতে কয়েক কোটি টাকা দিতে হয়। তিতাসের লোকজন এতটাই সংঘবদ্ধ যে তাঁদের বিরুদ্ধে কিছুই করা যায় না।’

সম্প্রতি নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শিল্পে বয়লারে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ইউনিটপ্রতি ৯৩ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে প্রতি ইউনিট গ্যাসর দাম ৪ টাকা ৭৬ পয়সা থেকে বেড়ে ১৫ টাকা হবে। অন্যদিকে, শিল্পকারখানায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশনের ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব হচ্ছে ৬৬ শতাংশ। তাতে প্রতি ইউনিটের দাম ৯ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বেড়ে হবে ১৬ টাকা।

এই তথ্য উল্লেখ করে বিটিএমএ সভাপতি তপন চৌধুরী বলেন, ‘গত দুই বছরে সরকার গ্যাসের মূল্য ২২২ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। তবে আমাদের বস্ত্রকলগুলো তাদের তৈরি সুতা ও কাপড়ের মূল্য বাড়াতে পারেনি। কারণ, বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাকের মূল্য বাড়েনি।’ তিনি বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের গ্রহণযোগ্য মূল্য নির্ধারণ করা দরকার। এর জন্য গণশুনানিতে ভিত্তি না করে সংশ্লিষ্ট খাতের প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হোক। সেই কমিটির মতামতের ভিত্তিতে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ হবে।

তপন চৌধুরী বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের বর্ধিত দাম কত বছর পর্যন্ত বহাল থাকবে, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন। অন্যথায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হবে।

সভায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। যে হারে মূল্যবৃদ্ধির করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাতে একটা বস্ত্রকলও টিকবে না। তিনি বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নতুন করে চিন্তা করা দরকার।

প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী সভায় উপস্থিত বস্ত্রকল ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। গ্যাসের দাম এমনভাবে বাড়ানো হবে, যাতে তা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রীর তেমনটাই নির্দেশনা দিয়েছেন—দাম একবারের বাড়বে না। ধাপে ধাপে বাড়বে।’

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘পেট্রোবাংলা প্রতিদিন ৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা লোকসান গুনছে। দেশীয় উৎসের গ্যাস হওয়ায় লোকসান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এখন এলএনজি আমদানি করতে হবে। তবে ১২২ শতাংশ থেকে কমিয়ে মাত্র ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। সে জন্য ১৪-১৫ টাকার মধ্যে গ্যাস দাম থাকবে।’ তিনি বলেন, দাম একেবারে বাড়ানো হবে না। ধাপে ধাপে বাড়ানো হবে।