বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে উঠলেও সর্বোচ্চ দরদাতাদের কাছে বিক্রি হয়নি

>
  • এবার নিলামে ১১১টি গাড়ি
  • এসব গাড়ির বয়স ১১-২৩ বছর
  • গাড়িগুলো পড়ে আছে ৫-৭ বছর

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকেরা কারনেট বা পর্যটন সুবিধায় এসব বিলাসবহুল গাড়ি এনেছিলেন। কিন্তু ওই সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগে কাস্টমস বিভাগ কড়াকড়ি আরোপ করায় আমদানিকারকেরা গাড়িগুলো বন্দরে ফেলে রেখে সটকে পড়েন। তাই এ নিলাম।

প্রথম দফায় ২০১৬ সালের আগস্টে ৮৫টি এবং দ্বিতীয়বারে ২০১৭ সালের মে মাসে ১১৩টি গাড়ি নিলামে তোলে কাস্টম। প্রতিবারই সর্বোচ্চ দরদাতার তালিকা প্রকাশ করা হয়। আইনগত কোনো বাধা না থাকলেও কাস্টমস বিভাগ একটি গাড়িও নিলামে বিক্রির অনুমোদন দেয়নি বলে অভিযোগ আছে। এবার নিলাম তালিকায় রাখা হয়েছে ১১১টি গাড়ি। কিন্তু আগের দুই নিলামে কাস্টমস গাড়ি বিক্রি না করায় এবার অনেকেই অংশ না-ও নিতে পারেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগের নিলাম বাতিল হওয়ায় এবার গাড়িগুলো ‘প্রথমবার’ নিলামে তোলা হচ্ছে বলে দেখানো হয়েছে। যেসব গাড়ি উঠছে নিলামে—বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জ, লেক্সাস, ফোর্ড কার, জাগুয়ার, ল্যান্ড ক্রুজার জিপ, ল্যান্ড রোভার গাড়ি ইত্যাদি। এসব গাড়ি জার্মানি, যুক্তরাজ্য, জাপান ও কোরিয়ায় তৈরি। এগুলো তৈরি করা হয় ১৯৯৫ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে। এসব গাড়ির বয়স ১১ থেকে ২৩ বছর। গাড়িগুলো বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের মধ্যে পড়ে আছে পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে।

কাস্টমের প্রথমবার নিলাম পণ্যের সংরক্ষিত মূল্যের (শুল্ক-করসহ সম্ভাব্য দাম) ৬০ শতাংশের বেশি দর পড়লে বিক্রির অনুমোদন দেওয়া যায়। কিন্তু তখন ৫৯টি গাড়ি কিনতে দরপত্রদাতারা আগ্রহ দেখালেও অনুমোদন পাননি। দ্বিতীয় নিলামে প্রথমবারের চেয়ে বেশি দর পড়লে বিক্রির অনুমোদন দেওয়ার সুযোগ থাকে। সেবার ৯৩টি গাড়ি কেনার আগ্রহ দেখান দরদাতারা। এর মধ্যে ৫৬টি গাড়ির জন্য প্রথমবারের চেয়ে বেশি দর পড়েছিল, যদিও কেউই অনুমতি পাননি।

তৃতীয় দফায় যেকোনো দরই অনুমোদন দিতে পারে কাস্টম। তাই ধারণা করা হচ্ছে গাড়িগুলো ‘প্রথমবার’ নিলামে তোলা হচ্ছে বলে দেখানোর কারণে এবারও কোনো গাড়ি বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

পাঁচ বছরের পুরোনো হওয়ায় এসব গাড়ি বন্দর থেকে খালাসের আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স পারমিট) নিতে হবে। আবার এই ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে হবে, যিনি গাড়ি পাবেন তাঁকে।

প্রথমবার নিলামে পিএইচপি গ্রুপ ল্যান্ড রোভার ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি ১ কোটি ১১ লাখ টাকা দর দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছিল। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বিক্রির অনুমোদন না দেওয়ার পর থেকে তারা আর কোনো নিলামেই অংশ নেয়নি।

দ্বিতীয় দফার নিলামে ২২ লাখ টাকা দর দিয়ে একটি জিপ গাড়ির সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছিল শাহ আমানত ট্রেডিং। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সেলিম রেজা গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বারবার নিলাম হয়, কিন্তু বিক্রি হয় না। কাস্টমস কর্তৃপক্ষই তাদের স্থায়ী আদেশ মানছে না। তাই আর গাড়ির নিলামে অংশ নিতে চাই না।’

একইভাবে ২৬টি গাড়ির সর্বোচ্চ দরদাতা হয় আর অ্যান্ড এইচ সিন্ডিকেট ও তাজ ট্রেডিং। বিভিন্ন ক্রেতার কাছ থেকে গাড়ি বিক্রির চাহিদা নিয়ে তারা নিলামে অংশ নেয়। প্রতিষ্ঠান দুটির মালিকানায় থাকা মো. ইকবাল হোসেন গতকাল বলেন, ‘এবার নিলামে অংশ নেব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ হলো গতবার ১ কোটি ১৭ লাখ টাকার পে-অর্ডার কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে এক বছর আটকে থাকায় ১২ লাখ টাকার সুদ গুনতে হয়েছে। ক্রেতাদের কাছে গাড়ি বুঝিয়ে দিতে না পারায় গায়ে দাগ লেগে গেছে।’

জানতে চাইলে কাস্টমসের নিলাম শাখার উপকমিশনার তপন চন্দ্র দে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অসামঞ্জস্য থাকায় আগের নিলাম বাতিল করা হয়েছে। এবার নিলাম কমিটিতে কারিগরি লোক রেখে নতুনভাবে গাড়ি যাচাই করে তবেই তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আশা করি, সাড়া পাওয়া যাবে।’ 

তপন চন্দ্র দে আরও জানান, গতবার নিলাম কমিটিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিনিধি থাকলেও সভায় উপস্থিত ছিলেন না। এ কারণে রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশনা অনুযায়ী এবার দুদকের প্রতিনিধি রাখা হয়নি।