সামাজিক নিরাপত্তায় পিছিয়ে বাংলাদেশ, বরাদ্দও কম

>
  • এসকাপের প্রতিবেদন
  • সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে জিডিপির অনুপাতে বাংলাদেশের ব্যয় নেপাল ও ভুটানের চেয়েও কম।
  • তবে পাকিস্তানের চেয়ে বেশি।

জনগণকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসার দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এ দেশে কমপক্ষে একটি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাধীন রয়েছে মোট জনসংখ্যার ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়ায় এ হার ৮৫ শতাংশ। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হারে মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আছে। বাংলাদেশের পেছনে আছে ভারত। যদিও এ বছর তারা স্বাস্থ্য সুরক্ষার মধ্যে ৫০ কোটি মানুষকে নিয়ে আসার কর্মসূচি নিয়েছে।

শুধু সুবিধাভোগীর হার নয়, সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দের দিক থেকেও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এ খাতে সরকারের বরাদ্দ নেপাল ও ভুটানের তুলনায় কম।

জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিকের (এসকাপ) অর্থনৈতিক ও সামাজিক জরিপে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার এই চিত্র উঠে এসেছে। এ প্রতিবেদনটি গত ৮ মে প্রকাশ করা হয়। এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আজ বৃহস্পতিবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের যে বাজেট ঘোষণা করবেন, তাতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। এতে উপকারভোগীর সংখ্যাও বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

অবশ্য দেশের অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, দেশে সামাজিক সুরক্ষার প্রথাগত কর্মসূচির পাশাপাশি সর্বজনীন পেনশনের মতো কর্মসূচি চালু করা দরকার। যাতে মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা তৈরি হয়।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, উন্নত দেশগুলোতে সর্বজনীন পেনশন, বেকার ভাতার মতো বিভিন্ন নিরাপত্তা কর্মসূচি আছে। এর মাধ্যমে সমাজের শীর্ষ ৫-১০ শতাংশ ধনীরা বাদে বাকিরা সবাই কোনো না কোনোভাবে উপকৃত হয়। বাংলাদেশকেও এমন ব্যবস্থা করতে হবে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভারত তাদের এ বছরের বাজেটে ৫০ কোটি মানুষকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনার প্রকল্প ঘোষণা করেছে। ধীরে ধীরে তারা সবাইকে এর আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্য ঠিক করেছে।

এসকাপের প্রতিবেদনে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১১টি দেশের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকা জনসংখ্যার হার তুলে ধরা হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশের পেছনে কেবল ভারত। পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটানের তথ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই। অবশ্য বিভিন্ন দেশ তার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) কত শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ব্যয় করে, তার চিত্রে পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান ও ভারতের কথা উল্লেখ আছে। এতে দেখা যায়, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও তুরস্কের চেয়ে বাংলাদেশের ব্যয় কম। অন্যদিকে পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের ব্যয় বেশি।

সামাজিক নিরাপত্তায় বাংলাদেশ জিডিপির ১ দশমিক ৭ শতাংশ ব্যয় করে। অন্যদিকে পাকিস্তান ব্যয় করে মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করে তুরস্ক। তাদের ব্যয়ের পরিমাণ জিডিপির সাড়ে ১৩ শতাংশ।

দেশে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষার বিভিন্ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ছিল ৫৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। আজ ঘোষণা হতে যাওয়া আগামী অর্থবছরের বাজেটে তা ৬৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এখন দেশে প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতাসহ প্রায় ১৪৫টি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি আছে। দেশে যেসব সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি আছে তাতে একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়া, টানাটানি, সমন্বয়হীনতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব রয়েছে। উপকারভোগী নির্বাচনে দুর্নীতির অভিযোগও ব্যাপক।

দেশে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ৮৬ লাখ। এ সংখ্যাটি আসছে বাজেটে ১০ লাখ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। এ ছাড়া সর্বজনীন পেনশনের কাঠামো ও রূপরেখা নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকারের হিসাবে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনসহ এ খাতে ব্যয় জিডিপির ২ দশমিক ৪ শতাংশ। সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করলে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন মিলিয়ে ব্যয় বরাদ্দের হিসাব করতে হবে।