ভোটের আগে বাড়ল ভাতা

সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে উপকারভোগীদের ভাতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬৪ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
বাজেটে ভাতা বাড়ছে মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, বিধবা, হিজড়া, বেদে, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ও দরিদ্র মায়েদের। বাড়ছে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের পরিধিও।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল বাজেট বক্তব্যে বলেন, দারিদ্র্য ও অসমতা কমাতে নিয়মিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাইরে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম হলো অন্যতম হাতিয়ার। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে হতদরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দিকে লক্ষ রেখে প্রতিবছর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হচ্ছে। বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হচ্ছে দুর্যোগপ্রবণ ও অতিদরিদ্র এলাকা এবং জনসংখ্যার অনুপাত।
মন্ত্রী বলেন, ভাতার হার ও ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমকে লক্ষ্যভিত্তিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সংস্কার কার্যক্রম তথা জি-টু-পি পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এর আওতায় প্রত্যেক উপকারভোগী সরকারি কোষাগার থেকে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে নিজ নিজ পছন্দের ব্যাংক হিসাব বা মোবাইল হিসাবে মাসের নির্দিষ্ট তারিখে ভাতা পাবেন। পাশাপাশি, জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সংযোগ রেখে প্রত্যেক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির জন্য ডিজিটাল তথ্যভান্ডার প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা উপকারভোগী নির্বাচনে দ্বৈততা পরিহারে সহায়তা করবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা এবং প্রতিবন্ধী ভাতা ১১টি জেলায় জি-টু-পি পদ্ধতিতে বিতরণের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

বরাদ্দ, আওতা ও ভাতার পরিমাণ
প্রস্তাবিত বাজেটে অসচ্ছল, যুদ্ধাহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা অথবা নাতি-নাতনিদের সহায়তার জন্য ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
এ ছাড়া বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৩৫ লাখ থেকে ৪০ লাখে বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিধবা ও স্বামী-নিগৃহীত নারী ভাতাভোগী ১২ লাখ ৬৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৪ লাখ করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সম্মানী ভাতা ও উৎসব ভাতার পাশাপাশি বছরে ২ হাজার টাকা করে বাংলা নববর্ষ ভাতা এবং জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিজয় দিবস উপলক্ষে পাঁচ হাজার টাকা করে বিশেষ সম্মানী ভাতা চালুর প্রস্তাব করা হয়।
অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ৮ লাখ ২৫ হাজার থেকে ১০ লাখ, প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের উপবৃত্তির হার প্রাথমিক স্তরে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা করা হয়েছে। আর এই ভাতাভোগীর সংখ্যা ৮০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৯০ হাজার জন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উপবৃত্তির হার প্রাথমিক স্তরে ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা, উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং উচ্চতর স্তরে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৬ হাজার থেকে ৬৪ হাজার, তাদের মধ্যে বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ২৩ হাজার থেকে ৪০ হাজার এবং শিক্ষা উপবৃত্তির সংখ্যা ১১ হাজার থেকে ১৯ হাজারে উন্নীত করার কথা জানান অর্থমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদ্‌রোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির উপকারভোগীর সংখ্যা ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার, চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির উপকারভোগী ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার, দরিদ্র মায়ের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা মাসিক ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, তাঁদের ভাতার মেয়াদ দুই বছরের বদলে তিন বছর এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা ৬ লাখ থেকে ৭ লাখে উন্নীত করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তার আওতায় মাসিক ভাতা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং ভাতার মেয়াদ দুই বছরের বদলে তিন বছর করা এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ লাখ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজারে উন্নীত করার কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় ২০ হাজার করে মোট ৪০ হাজার ভিজিডি কার্যক্রমের উপকারভোগী বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। এতে ভিজিডি কার্যক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১০ লাখ ৪০ হাজারে।