জিডিপি অনুপাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সিপিডির সংশয়

২০১৮-১৯ প্রস্তাবিত বাজেটের পর্যালোচনা তুলে ধরে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। ৮ জুন, লেকশোর হোটেল, গুলশান। ছবি: তানভীর আহম্মেদ
২০১৮-১৯ প্রস্তাবিত বাজেটের পর্যালোচনা তুলে ধরে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। ৮ জুন, লেকশোর হোটেল, গুলশান। ছবি: তানভীর আহম্মেদ

২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে নবীন বাংলাদেশের জন্য প্রবীণ বাজেট বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

সংস্থাটি মনে করছে, দেশের অর্থনীতির সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো আসছে, তা মোকাবিলায় বক্তব্য ও কার্যকর পদক্ষেপ বাজেটে নেই।

পাশাপাশি বাজেটে রাজস্ব আদায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে সিপিডি।

সিপিডি মনে করছে, বাজেটে যে বাড়তি ব্যয়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে, তার বড় অংশ যাবে জনপ্রশাসন ও সুদ ব্যয় খাতে। সে তুলনায় উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধির হার একটি জায়গায় আটকে আছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে জিডিপি অনুপাতে যে ব্যয় করা দরকার, সেটি নেই। অনলাইনভিত্তিক ই-কমার্স ও তরুণদের উদ্যোগকে চ্যালেঞ্জর মুখে ফেলবে নতুন বাজেট। ব্যাংক খাতের করপোরেট কর হার কমানোর কঠোর সমালোচনা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

২০১৮-১৯ প্রস্তাবিত বাজেটের পর্যালোচনা তুলে ধরেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ৮ জুন, লেকশোর হোটেল,  গুলশান। ছবি: তানভীর আহম্মেদ
২০১৮-১৯ প্রস্তাবিত বাজেটের পর্যালোচনা তুলে ধরেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ৮ জুন, লেকশোর হোটেল, গুলশান। ছবি: তানভীর আহম্মেদ

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে এসব মতামত তুলে ধরেছে সিপিডি। রাজধানীর গুলশানের লেক শোর হোটেলে আজ শুক্রবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব পর্যালোচনা তুলে ধরেন সংস্থাটির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। উপস্থিত ছিলেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, মূলত দুটি দিক থেকে সিপিডি এ বাজেটকে পর্যালোচনা করেছে। এগুলো হলো সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে নতুন যেসব চাপ অর্থনীতির সামনে আছে সেগুলো মোকাবিলায় বাজেটে দিকনির্দেশনা এবং সম্পদের সুষম বণ্টন ও বৈষম্য রোধ করা।

বাজেট বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বেশ কিছু ভালো-মন্দ দিক চিহ্নিত করেছে সিপিডি। স্বল্পমেয়াদি ভালো দিকের মধ্যে রয়েছে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা, সরকারি বিনিয়োগের অব্যাহত বৃদ্ধি, রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক নিরাপত্তাবলয় বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ বৃদ্ধি। স্বল্পমেয়াদি সমস্যার মধ্যে আছে রাজস্ব আদায় বাড়াতে দুর্বলতা, এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি, কৃষকের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি।

সিপিডি বলছে, এবারের বাজেটের ভালো দিক হলো ধনীদের সম্পদের ওপর সারচার্জ বাড়ানো, স্থানীয় শিল্পের প্রসারে নীতিসহায়তা, প্রতিবন্ধীবান্ধব হাসপাতালের সুবিধা, গরিবের রুটি-বিস্কুট ও পাদুকার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) তুলে নেওয়া ইত্যাদি। সিপিডি মনে করছে, ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো উচিত, ব্যাংকের করপোরেট কর কমানোর সুফল সুদের হার ও তারল্য সংকটের ওপর প্রভাব ফেলবে না। উবার, পাঠাওয়ের মতো রাইড সেবা ও ই-কমার্স ব্যবসার ওপর ভ্যাট আরোপের ফলে তরুণদের উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হবে। একই সঙ্গে তা শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ব্যয় বাড়াবে।

তামাকজাত পণ্য রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক তুলে দেওয়ার সমালোচনা করেছে সিপিডি। তারা মনে করছে, এটা করা হলে দেশে তামাক উৎপাদন বাড়বে, যা সরকারের তামাক উৎপাদন বন্ধ করা নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ব্র্যান্ডের পোশাক ও আসবাবের ওপর এবং আমদানিতে উৎসে ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে মানুষের ব্যয় বাড়বে। তবে এ সিদ্ধান্ত অর্থমন্ত্রী ভ্যাটের হার সমন্বয়ের জন্য নিয়েছেন বলে সিপিডি মনে করে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যার পুঁজি ও সম্পদ আছে তাঁর আয় বাড়ানোর সুযোগ আছে। কিন্তু শ্রম ও উদ্যোগের মূল্য নেই। ধনী-গরিবের বৈষম্যও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আগের চেয়ে বেড়েছে। বৈষম্য বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ যেন পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ভাগ হয়ে গেছে। পূর্ব দিকে আছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটের মতো ধনী অঞ্চল। আর পশ্চিম দিকে আছে বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহীর মতো দরিদ্র অঞ্চল।

এক প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ বাজেটে জনতুষ্টির জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির জন্য সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও ভাতা বাড়ানো হয়েছে। আবার অনেক ছোট ছোট প্রকল্প আছে যেগুলোকে জনতুষ্টিমূলক বলা যেতে পারে। তিনি বলেন, করমুক্ত আয়সীমা মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় হিসাব করে বিবেচনা করা দরকার।