বাজেটে অবকাঠামোয় জোর, ঘোষণা নেই নতুন এমপিওভুক্তির

>

• শিক্ষায় জাতীয় বাজেটে খাতওয়ারি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ
• প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের জন্য ৫৩ হাজার ৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব

আসন্ন ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের জন্য ৫৩ হাজার ৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে খাতওয়ারি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ। তবে বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়, কারিগরি বিদ্যালয় ও কলেজ নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অন্যান্য খাতের মতো শিক্ষা খাতে অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বলেন। তবে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত (বেতন বাবদ মাসিক সরকারি অনুদানভুক্ত করা) করার বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা নেই।

প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে টাকার অঙ্কে মোট বরাদ্দ করা হয়েছে ২২ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। গতবার এই মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল ২২ হাজার ২২ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে তা কমে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৯৮ কোটি টাকা।

এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীনে ২৪ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গতবার প্রস্তাব করা হয়েছিল ২৩ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমে দাঁড়ায় ২১ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গতবার ৫ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হলেও সংশোধিত বাজেটে কমে হয় ৫ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। 

যেসব কাজ করা হবে
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, উপবৃত্তি, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক ওয়াশ ব্লকসহ ৭ হাজার বিদ্যালয় নির্মাণ, ৬৫ হাজার শ্রেণিকক্ষ, ১০ হাজার ৫০০টি শিক্ষক কক্ষ, ৫ হাজার বিদ্যালয়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হবে। আগের ধারাবাহিকতায় বিদ্যালয়বিহীন এলাকাগুলোতে এক হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সব ইউনিয়ন ও কয়েকটি শহরে আইসিটিভিত্তিক কমিউনিটি লার্নিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হবে। ৬৪ জেলায় ৬৪টি জীবিকায়ন ও জীবনব্যাপী শিখন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনাও আছে। চলমান প্রশিক্ষণের বাইরে ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষার্থীদের গণিতভীতি দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে জোর, হচ্ছে প্রশ্নব্যাংক
‘সরকারি কলেজে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০০টি সরকারি কলেজে প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থী এবং ‘সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন’ প্রকল্পের অধীনে ৩২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩ লাখ ২৯ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পের আওতায় মাল্টিমিডিয়াসহ শ্রেণিকক্ষ, ভাষা কাম আইসিটি ল্যাব, হোস্টেল নির্মাণ, আসবাব ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া মহাবিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসাসহ ২৬ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৪৬ হাজার ৩৪০টি মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ ও ২ হাজার ১২০টি স্মার্ট শ্রেণিকক্ষ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রশ্নপত্র প্রণয়নে গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে সব বোর্ডের সমন্বিত উদ্যোগে প্রশ্নব্যাংক তৈরির চেষ্টাও করা হচ্ছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

১০০টি উপজেলায় একটি করে কারিগরি বিদ্যালয় ও কলেজ নির্মাণ, ৩৮৯টি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, চারটি বিভাগীয় শহরে চারটি মহিলা পলিটেকনিক, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে বালিকা কারিগরি বিদ্যালয়, ২৩টি জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং সব বিভাগে একটি করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৬৫৩টি মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অর্থমন্ত্রীর বাজেট ঘোষণার পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এরপরও দেওয়ার সুযোগ আছে এবং আমি আশা করি, তিনি (অর্থমন্ত্রী) তাঁর কথা রাখবেন এবং সুযোগ করে দেবেন।’