'ব্যাংক ডাকাতদের' শাস্তি চায় এফবিসিসিআই

>
  • একশ্রেণির লোক ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাংকের টাকা তছরুপ করেছেন
  • স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে
  • জনগণের আমানত যেন তছরুপ না হয়, সুদের হার না বাড়ে
  • দোষীদের বিচারের আওতায় আনার প্রস্তাব

ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হওয়াকে ব্যাংক ডাকাতি বলে অভিহিত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি বলেছেন, ‘একশ্রেণির লোক আছেন, যাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাংকের টাকা তছরুপ করেছেন, ব্যাংকের টাকা ডাকাতি করেছেন। আমরা তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যাঁরা ব্যবসা করতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যাংকের সহায়ক ভূমিকা দেখতে চাই।’

২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের পর্যালোচনা তুলে ধরতে গিয়ে সংগঠনটির সভাপতি এসব কথা বলেন। গতকাল শনিবার মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের বাজেট পর্যালোচনা তুলে ধরে এফবিসিসিআই।

অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি সংগঠনটির পক্ষে ব্যাংকে অনিয়মের জন্য তদন্তের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং খাত নিয়ে সমালোচনা শোনা যাচ্ছে। মুষ্টিমেয় কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে ব্যাংকিং খাতে একধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে, যা আমাদের নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। বিষয়টি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার প্রস্তাব করছি, যাতে করে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন বজায় থাকে।’

প্রশ্নোত্তর পর্বেও ব্যাংক নিয়ে একাধিক প্রশ্নের উত্তর দেন শফিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি, বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক ডুবতে বসেছে। এর জন্য দায়ীদের অনেকেই এখন বিচারাধীন আছেন। বিচারাধীন বিষয়ে আমরা মন্তব্য করতে চাই না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংক একীভূত, অধিগ্রহণ—কী করলে ভালো হবে, এগুলোর সব তথ্য অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকে আছে। তারা সুনির্দিষ্টভাবে এগুলো খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে, সেটি আমাদের দাবি।’

ব্যাংকিং কমিশন গঠন নিয়ে অর্থমন্ত্রীর পিছু হটার বিষয়ে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, ‘সেটা অর্থমন্ত্রী ভালো বলতে পারবেন। তবে দেশে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি ছিল, তা থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে। আমরা চাই এ ক্ষেত্রে আরও উন্নতি হোক। অনেক সাবেক মন্ত্রী, অনেক সাংসদকেও কিন্তু আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এটি আশাব্যঞ্জক। আমরা চাইব তাঁদের কারণে জনগণের আমানত যেন তছরুপ না হয়, যেন সুদের হার না বাড়ে, যেন বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এ ক্ষেত্রে সরকার উদ্যোগ নেবে।’

সার্বিক বাজেট নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের মূল্যায়ন হলো, এই বাজেটে আর্থসামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী ইত্যাদি খাতে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় সুবিধাভোগীদের সংখ্যা এবং মাসিক ভাতার হার বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, যোগাযোগব্যবস্থাসহ অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে তা নিঃসন্দেহে বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান-প্রক্রিয়া গতিশীল করবে বলে উল্লেখ করেছে এফবিসিসিআই।

অবশ্য বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার ব্যাংক খাত থেকে বাড়তি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাধা তৈরি হতে পারে বলে মনে করে এফবিসিসিআই। একই সঙ্গে তারা বাজেট বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প পরিচালকদের জবাবদিহির মধ্যে আনার তাগিদ দিয়েছে।

বাজেট ব্যবসাবান্ধব কি না—জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, ব্যবসায়ীদের বেশ কিছু ক্ষেত্রে সুবিধা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়বে। তবে সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিলে বাজেটে বিশেষ কোনো হেরফের হবে না। বাজেটে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের প্রাক্কলন করা হয়েছে, তা বেসরকারি খাত অর্জন করতে পারবে কি না—জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, বিনিয়োগের সক্ষমতা বেসরকারি খাতের আছে। এর জন্য পরিবেশ তৈরি করা দরকার। পুঁজিবাজারে অনুকূল পরিবেশ না থাকলে, সুদের হার বেশি হলে তাহলে বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হবেন না।

অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সক্ষমতা বাড়ানো, উৎপাদনশীল খাতে করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমানো, পোশাক খাতের করপোরেট কর আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়া, করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা করা, হয়রানি রোধে কর কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছা ক্ষমতা কমানোসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়। তাঁরা স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া ও কিছু শিল্প খাতে উপকরণের কর কমানোয় সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি ঢাকা মহানগরে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো প্রকল্পগুলো সমাপ্ত হওয়ার আগে অ্যাপসভিত্তিক পরিবহনের রাইড শেয়ারিং সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আরোপ না করার সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, বর্তমান যানজটে দ্রুত যাতায়াতের জন্য এ ধরনের সেবার জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

 এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, সহসভাপতি মো. মুনতাকিম আশরাফ এবং সংগঠনের পরিচালকেরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।