সুযোগ বুঝে চালের দাম বাড়ালেন ব্যবসায়ীরা

চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে খোদ ব্যবসায়ীরাই জানিয়েছেন। ফাইল ছবি
চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে খোদ ব্যবসায়ীরাই জানিয়েছেন। ফাইল ছবি
>
  • চট্টগ্রামে পাইকারি বাজারে চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে
  • মজুত চালের পুরোটাই শূন্য শুল্কের সুযোগ নিয়ে আমদানি করা
  • গত দুই দিনে দেশে নতুন করে চাল আমদানি হয়নি
  • ভারতে চালের দাম প্রতিদিন কমছে
  • অন্যান্য দেশেও চালের দাম স্থির আছে
  • চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই

দেশের ব্যবসায়ীদের কাছে যে চাল মজুত আছে, তার পুরোটাই শূন্য শুল্কের সুযোগ নিয়ে আমদানি করা। গত দুই দিনে দেশে নতুন করে কোনো চালও আমদানি হয়নি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর, বাংলাদেশে চালের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ ভারতে চালের দাম প্রতিদিন কমছে। অন্যান্য দেশেও চালের দাম স্থির আছে। ফলে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে খোদ ব্যবসায়ীরাই জানিয়েছেন।

অর্থনীতিবিদ ও চালের বাজার পর্যবেক্ষণকারী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালের বাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের এই সুযোগসন্ধানী আচরণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের খাদ্য উপদেষ্টা ড. এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ভারত ইতিমধ্যে চালের রপ্তানি মূল্য কমিয়ে দিয়েছে। এর মানে তারা বাংলাদেশে আরও চাল রপ্তানি করতে চায়। তবে ব্যবসায়ীরা নতুন দামে চাল আমদানি না করেই দাম যেভাবে বাড়িয়ে দিলেন, তা উদ্বেগজনক।

সরকারের উচিত এসব ব্যবসায়ী ও চালকলমালিকের সঙ্গে আলোচনা করে চালের দামের অযৌক্তিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া।

গত বৃহস্পতিবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে চালের আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ পুনর্বহাল করা হয়। বাজেটে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়। বাজেট ঘোষণার পর সাপ্তাহিক ছুটির কারণে শুক্রবার পাইকারি বাজারে লেনদেন হয়নি। গতকালই বাজারে বাজেট ঘোষণার পর প্রথম লেনদেন হয়।

ব্যবসায়ীরা জানান, গতকাল চট্টগ্রামের দুটি পাইকারি বাজার চাক্তাই ও পাহাড়তলীতে বেচাকেনার শুরুতে সব ধরনের চালের দাম কমবেশি বেড়ে যায়। বাজারে মোটা সেদ্ধ ও আতপ চালের দাম কেজিপ্রতি ২ টাকা এবং চিকন ও মাঝারি আকারের চালের দাম কেজিপ্রতি ৩ টাকা বেড়ে যায়। দাম বাড়লেও বাজারে গতকাল চাল বেচাকেনা কমেছে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রামে চালের অন্যতম প্রধান পাইকারি বাজার চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বাজেট ঘোষণার আগে থেকেই ব্যবসায়ী ও চালকলমালিকেরা চাল সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে তা ধরে রেখেছেন। ফলে বাজারে সরবরাহ কমে গিয়ে চালের দাম বেড়ে যেতে পারে।

চাক্তাই পাইকারি বাজারে গতকাল প্রতি কেজি বেশি আতপ চাল বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ১ হাজার ৮০০ টাকা। ইরি আতপের দামও কেজিপ্রতি ২ টাকা বেড়েছে। চাক্তাই পাইকারি বাজারে মক্কা ট্রেডার্সের বিক্রেতারা জানান, কম দামি চাল ২ টাকা বাড়লেও নাজিরশাইল ও পাইজাম চাল কেজিপ্রতি ৩ টাকা বেড়েছে।

চট্টগ্রামের পাহাড়তলী পাইকারি বাজারে বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণার দিন ভারত থেকে আমদানি করা স্বর্ণা সেদ্ধ চালের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৯৫০ টাকা। গতকাল বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ২ হাজার ৫০ টাকা। এ হিসাবে প্রতি কেজি মোটা সেদ্ধ চালের দাম বেড়েছে ২ টাকা।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে হাওরে ফসলহানির কারণে সরকারি হিসাবে দেশে চাল উৎপাদন ১০ লাখ টন কম হয়। উৎপাদন কমায় চালের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে বাজার সামাল দিতে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে সরকার তিন দফায় কমিয়ে চালের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়। এরপরই দেশে ব্যাপক হারে চাল আমদানি শুরু হয়।

খাদ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, চলতি অর্থবছরের (২০১৭-১৮) ১১ মাসে চাল আমদানি হয়েছে ৩৯ লাখ ৬৬ হাজার টন। শুল্ক আরোপ করায় এখন বেসরকারি খাতে চাল আমদানি কার্যত হবে না। অবশ্য শুল্ক আরোপ করার আগে বাজারে ভালো দাম না পাওয়ায় এক মাস ধরে বেসরকারি খাতে চাল আমদানি কমছিল।

দেশের চালকলমালিকদের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম লায়েক আলী প্রথম আলোকে বলেন, শুল্ক বাড়ানোর ফলে ও গত কয়েক দিনে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে ধানের আর্দ্রতা কমেছে। এতে শুকনা ধানের দাম প্রতি মণে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে গেছে। তবে এখনো চালের দাম বাড়ার কথা না। সরকারের উচিত চালের বাজারে তদারকি বাড়ানো।